Kalapara Upazila
পটুয়াখালী: ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের নামে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এবার ৪২ বিত্তবানের নামে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়ার তথ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে।
এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেহাত করে সংশ্লিষ্টরা বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহতী উদ্দোগ আশ্রয়ন প্রকল্পকে। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর অভিযুক্ত মাষ্টার মাইন্ডকে বাঁচাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে একটি মহল।
ফোন বন্ধ রেখে গাঁ ঢাকা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার। আর গত ক’দিনে বেশ কয়েক দফা রুদ্ধ দ্বার বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার এর উপর সমুদয় দোষ চাপিয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন।
এরপর ইউএনও’র স্বাক্ষর সম্বলিত সমুদয় কাগজপত্র সাব রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে হস্তগত করেছে উপজেলা প্রশাসন, যাতে থলের আসল বেড়াল বেড়িয়ে না পড়ে। তবে এ নিয়ে জেলা প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা গনমাধ্যমকে বলেছেন।
মুজিব শতবর্ষে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমি সহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে তিনটি স্মারকে ১৯৫ টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রী করতে খেপুপাড়া সাব রেজিষ্ট্র্রী অফিসে প্রেরণ করা হয়। একই সাথে ৪২টি বিত্তবান শ্রেণির কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে তাদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমির দলিল রেজিষ্ট্র্রী করা হয়।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়াত দলিল রেজিষ্ট্রী করা হয়। এই ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২ টি নামে এই পরিমান খাস জমি মুজিবশতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে।
যার অনুমোদন নিতে হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকেও। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিষ্ট্রী অফিসের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।
কারণ মুজিববর্ষের সকল কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রীতে দুই শতক খাস জমি দেয়ার কথা লেখা থাকলেও কিভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রী করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির।
খেপুপাড়া সাব রেজিষ্ট্রার রেহেনা পারভিন বলেন, ‘যেহেতু ভূমিহীন গৃহহীনদের দলিল ছিল, ইউএনওর সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছে।
তাই সরল বিশ^াসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এই অবস্থা।’ সাবরেজিষ্ট্রী অফিসের অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি বন্দোবস্ত কেসে ইউএনও’র স্বাক্ষর ছিল। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর সকল কাগজ পত্র এসি ল্যান্ড ও ইউএনও হস্তগত করেছেন।
এর আগে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আড়াই কোটি টাকা লোপাটের তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের পর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
এরপর অভিযোগকারী বাদলকে টিউবওয়েল সহ সকল সরকারী সেবা-সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে আশ্বস্ত করে ঘর পেতে টাকা পয়সা দেওয়ার কথা না বলার জন্য অনুরোধ করেন ইউএনও আবু হাসনাত, যার অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
এছাড়া ঘর বরাদ্দে উৎকোচ গ্রহনের বিষয়ে অভিযোগ সম্বলিত বক্তব্য দেয় ভুক্তভোগীরা, যার ভিডিও সংরক্ষিত আছে। কিন্তু এরপরও রহস্যজনক কারনে অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।
এমনকি ইউএনও নিস্পাপ মর্মে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ক’জন গনমাধ্যম কর্মীর সাফাই বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিটি। এতে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আড়াই কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ চাপা পড়ে রহস্যজনক ভাবে।
এদিকে ৪২ বিত্তবানের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর খাস জমি দলিল রেজিষ্ট্রী কান্ডে ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক এর সই স্ক্যানিং করে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এমন অপকর্ম করেছে বলে দাবী করেছে কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক।
তিনি সার্ভেয়ারকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে ৭২ একর খাসজমি রেজিষ্ট্রী কান্ডে আর কে কে জড়িত? এমন প্রশ্ন এখন অফিস পাড়ায় মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত কার পকেটে পাওয়া যায় কালো বেড়াল, এটা দেখা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র, না আবার সব সম্ভবের দেশে ফের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে শোনা যায় তদন্ত কমিটির কাছে?
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, বিত্তবানদের নামে দেয়া ৭২ একর খাস জমি বন্দোবস্ত কেসগুলো বাতিলের উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। - গোফরান পলাশ