ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই বিশ্বে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তা অস্বীকার করেছেন। আংকারায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট কাভুসগলুর সঙ্গে এক বৈঠকের পর তিনি এই মন্তব্য করেন।
ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে কিভাবে খাদ্য শস্য-বাহী জাহাজ আবার চলাচল শুরু করতে পারে, তা নিয়ে তুরস্ক একটা মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন থেকে বিশ্বে খাদ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্যশস্যের দাম বাড়তে শুরু করে।
আংকারার বৈঠক শেষে মিস্টার লাভরভ বলেছেন, রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো মাইন-মুক্ত করতে প্রস্তুত, যদি ইউক্রেনিয়ানরাও একই সঙ্গে কাজটি করতে রাজী হয়।
তবে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেল রাশিয়ার বক্তব্যকে একগাদা মিথ্যে বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়ার খাদ্য সরবরাহকে এখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরোধ করছে, কৃষিজমিকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে এবং বিশ্বে দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর প্রধান ডেভিড বিসলি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি ইউক্রেনের বন্দরগুলো খুলে দেয়া না হয়, এটি হবে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।
এদিকে ইতালি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়া যদি শীঘ্রই কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে না দেয়া, তাহলে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যাবে।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি ডি মাইও বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ আটকে দেয়ার মানে হচ্ছে লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুকে জিম্মি করা এবং তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত একটি বন্দর বেরডিনস্ক থেকে হয়তো এ-সপ্তাহে খাদ্য পাঠানো শুরু হতে পারে।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেছেন, ইউক্রেন মূলত জাতিসংঘের মাধ্যমে খাদ্যশস্যে পরিবহনের বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেছেন, বন্দরগুলো চালু করতে গিয়ে যেন কোনভাবেই ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি না হয়, যেন এই পথ ধরে রাশিয়া হামলা চালাতে না পারে, সেটা দেখতে হবে।
ইউক্রেন বলেছে, নিরাপদে খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্য যে রুট খোলার কথা হচ্ছে, সেটির নিরাপত্তার দায়িত্ব তুরস্কের নৌবাহিনীকে দেয়া হলে তাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সমঝোতা ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে।
সেভারোদোনেৎস্কে তীব্র লড়াই
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সেভারোদোনেৎস্কে তীব্র লড়াই অব্যাহত আছে। সেখানে রুশ সৈন্যদের মোকাবেলায় ইউক্রেনিয়ান বাহিনী হিমসিম খাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, তা সত্ত্বেও সেভারোদোনেৎস্কে ইউক্রেনিয়ানরা আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের যদি পিছু্ও হটতে হয়।
সেরহি হাইদাই বলছেন, রাশিয়া এখন তাদের আর সব জায়গার অভিযান বন্ধ করে কেবলমাত্র সেভারোদোনেৎস্কের লড়াইয়ের দিকে জোর দিচ্ছে। রুশরা তাদের গোলা এবং রকেট হামলা আরও বাড়াবে বলে তিনি আশংকা করেন, এরপর হয়তো তারা এক বিশাল অভিযান চালাবে।
গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, ইউক্রেন সেভারোদোনেৎস্কে আত্মসমর্পণ করবে না, তাদের যদি পিছু হটে অন্য কোন স্থানে শক্ত অবস্থান নিতে হয় তার পরেও। রাশিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করছে।
আযভস্টালের বন্দীরা রাশিয়ায়
মারিউপোলের আযভস্টাল ইস্পাত কারখানা প্রাঙ্গণে আত্মসমর্পণ করেছিল এমন এক হাজারের বেশি ইউক্রেনিয় যোদ্ধাকে সেখান থেকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে রুশ সরকারি গণমাধ্যম।
ইউক্রেনিয়ান সৈন্য এবং যোদ্ধারা প্রায় দুমাস ধরে মারিউপোলে রুশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
ইউক্রেনে এই যোদ্ধাদের জাতীয় বীর বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু রাশিয়ায় এদের দেখা হয় ভিন্ন দৃষ্টিতে। রাশিয়ার কোন কোন রাজনীতিক এদেরকে যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা না দিয়ে বরং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গণ্য করার আহ্বান জানান।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর খেরসন, যেটির প্রথম পতন ঘটেছিল, সেখানে ক্রেমলিনের একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা যত শীঘ্র সম্ভব এটিকে রাশিয়ার সীমানা-ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
রুশ নিযুক্ত প্রশাসনের ডেপুটি প্রধান, সের্গেই কিরিয়েংকো বলেছেন, ক্রাইমিয়াকে যেভাবে রাশিয়ার অংশ করা হয়েছে, খেরসন অঞ্চলকেও সেভাবে পুরোপুরি রাশিয়ার অংশ করা হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, সেখানে রুশ পাসপোর্ট দেয়ার কাজও শীঘ্রই শুরু হবে। যারাই পাসপোর্ট চায়, তাদেরকেই দেয়া হবে।
রুশদের হাতে যখন খেরসনের পতন ঘটে, তখন থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে এটিকে রাশিয়ার অংশ করার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করা হবে। তবে এই গণভোটে কারচুপির আশংকার কথা বলেছেন অনেকে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।