News update
  • ‘Very unhealthy’ air quality persists in Dhaka     |     
  • Customs duty on dates imports cut ahead of Ramadan     |     
  • NBR extends VAT exemption on Metro Rail services     |     
  • People eagerly await Tarique Rahman's homecoming Thursday     |     
  • Palm trees axed in Naogaon bypass for safety of electric line     |     

ঝিনাইদহে শেষ হলো শত সাপের ব্যতিক্রমী ঝাপান খেলা

আহমেদ নাসিম আনসারী খবর 2022-08-19, 10:23pm




মনিবের ইশারা ইঙ্গিত তাকে ঠিক বুঝিয়ে দিয়েছে, শুধু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার খেলা নয় বরং আজ মর্যাদার লড়াই। প্রতিযোগীদের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণিত করতে দলের ওঝাদের চলে আপ্রাণ প্রচেষ্টা।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগষ্ট) দিনব্যাপি আয়োজিত ঝাপান খেলা দেখতে জড়ো হয় হাজারও মানুষ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৩নং সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাঙ্গা সাহেবনগর গ্রামে আদিবাসি সম্প্রদায়ের আয়োজনে মনসা পূজাকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এই সাপের (ঝাপান) খেলা। 

সরোজমিনে দেখা যায়, শত শত মানুষের মাঝে কাঠের মাচাতে বিষধর সাপ রাখা। সাপুড়ে বাদ্দের তালে তালে গান গাইছে। সেই সাথে সাপগুলোও সাপুড়ের দিকে তাকিয়ে তাকে ছোবল মারতে চাইছে। চলে সাপ এবং সাপুড়ের প্রেমের মিতালী। এক সাপুড়ের গান শেষ হলে তিনি বসে যান তার সাপগুলোকে নিয়ে। তারপর আসেন নতুন এক সাপুড়ে। তিনিও তার সাপগুলোকে প্রদর্শন করেন। এভাবেই দিনভর চলে সাপের খেলা। দর্শকরাও দেখে আনান্দ উপভোক করেন। তিনটি দল এই খেলায় অংশ গ্রহণ করেন। খেলায় প্রথম হন আবু বক্কর সাপুড়ে। তাকে দেওয়া হয় নগদ ১০ হাজার টাকা।

সাপের খেলা দেখতে আসা মিনতী রাণী জানান, পাশের চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে তিনি এই পূজা এবং সাপের খেলা দেখতে বাবার বাড়িতে এসেছেন। মনসা পূজাকে ঘিরে তাদের এই আদিবাসি সম্প্রাদয়ের মধ্যে নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

আদিবাসি ছন্দা রাণী জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসায় তাদেরও অনেক ভালো লাগে।

খেলা দেখতে আসা জুয়েল জানান, আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা কোথাও দেখা যায় না। এবার’ই প্রথম তিনি এই ঝাপান খেলা দেখতে এসেছেন। 

সাপুড়ে গোলাপ হোসেন জানান, ছোট থেকেই তিনি এ পেশায় (সাপুড়ে)। গ্রামের লোকের বাড়ি এবং মাঠ থেকে বিষধর সাপ ধরেন। সেগুলোকে পেলে পুষে বিক্রয় করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেলা দেখান। এই সাপের খেলা (ঝাপান) দেখিয়ে তাদের তেমন সংসার চলে না। তারপরও এ পেশাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন।

সাপুড়ে আবু বক্কর জানান, ১৬ বছর বয়স থেকেই তিনি সাপুড়ে। এখন আর সাপ ধরেন না। গোমা, আড়ল বেকা, গোখরা ও কেউটোসহ বিষধর সাপের খেলা দেখান তিনি। মানুষকে আনন্দ দেওয়ায় মূল উদ্দেশ্যে তাদের।

পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাক উজ্জল বিশ্বাস জানান, পূর্বপুরুষেরা মনসা পূজা উপলক্ষে এই সাপের খেলার আয়োজন করে আসছে। তাদের দেখাদেখি গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এ বছর তেমন বাজেট না থাকায় প্রথম পুরুস্কার হিসেবে ১০ হাজার টাকা এবং ২য় ও ৩য় পুরুস্কার ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এই ঐতিহ্য সাপের (ঝাপান) খেলাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছেও সাহায্য কামনা করেন তিনি।

পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি প্রেম বিশ্বাস বলেন, আমরা আদিবাসি সম্প্রদায়। বিল-বাউড়ের মাছের উপরেই আমাদের নির্ভর। বাপ-দাদা পূর্বপুরুষ ধরে এই মনসা পূজাকে ঘিরে সাপের খেলা বা ঝানাপ খেলা দেখে আসছি। তাদের দেখা দেখি আমরাও করে আসছি। দরিদ্র মানুষ হিসেবে আমাদের যতটুকু সামর্থ আছে তেমন ভাবেই ছোট পরিসরে আমরা এই আয়োজন করে থাকি। তবে সরকারি ভবে যদি আমাদের সাহায্য করে তাহলে হয়তো আরো বড় পরিসরে এই আয়োজনটা করতে পারতাম।