News update
  • ‘March for Gaza’ in Dhaka Demands End to Israeli Offensive in Palestine     |     
  • Kishoreganj’s ‘Pagla Mosque’ collects 28 sacks of donation     |     
  • Bangladesh Sent Garments to 36 Nations via India     |     
  • NBR scramble to meet IMF conditions on revenue collection     |     

৫৫ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির সঙ্গে জড়িত কোম্পানির নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ

নিজস্ব প্রতিবেদক খবর 2023-11-11, 8:14pm

399797235_299488126285276_8727593699802157166_n-02315d00c6641ec3743b867dfc32b01c1699712069.jpg




করোনাকালে শুরু হওয়া কোরিয়ান এয়ারলাইনার জিন এয়ার এতোদিন নানা অজুহাতে ঢাকা-সিউল অনিয়মিত ফাইট পরিচালনা করে আসছিলো। এখন নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং অনুমতি পাওয়ার জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেন-দরবার চলছে। রবিবার বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত এই এয়ারলাইনারকে অনুমতি দেয়া যায় কিনা  তা নিয়ে এক সভার আয়োজ করছে বলে জানা গেছে। এই কোম্পানি ডিপ্লোম্যাটিক ফাইটের নামে বাণিজ্যিক ফাইট পরিচালনা করায় সরকারের অন্ততঃ ৫৫ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এই এয়ারলাইনার কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার আগেই টিকেট কাটে এবং প্রচারণা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছ।

অনুমতি পাওয়ার আগেই জিনএয়ার আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষনা দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশে ডিপ্লোম্যাটিক ফাইট বন্ধ হলেও জিন এয়ারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং জিন এয়ারকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। গত মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক বড়কর্তার নির্দেশে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবকে সরাসরি লেখা পত্রের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় জিন এয়ারকে তড়িঘড়ি করে একটি বিশেষ বাণিজ্যিক ফাইটের অনুমতি দেয়। যার ভিত্তিতে জিন এয়ার তাদের অবৈধভাবে অগ্রিম বিক্রি করা টিকিটের যাত্রী পরিবহন করে।

অভিযোগে বলা হয়, পরবর্তি সপ্তাহে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চক্রটি আবার জিন এয়ারের ফাইটের তদবির শুরু করে। তখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মী পরিবহনের দোহাই দিয়ে গত সোমবার ফ্লাইটের মাত্র এক ঘন্টা আগে আবারো একটি বিশেষ বাণিজ্যিক ফাইটের অনুমতি দেওয়া হয়। মাত্র ২৫ জন ইপিএস কর্মী পরিবহনের অজুহাতে জিন এয়ার উভয় প্রান্ত থেকেই শতাধিক যাত্রী আনা নেওয়া করে। ফলে যে এয়ার লাইন্সের ফাইট পরিচালনার অনুমতি নেই, তারা কিভাবে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই এয়ার লাইন্সের মাধ্যমেই কেন ইপিএস পাঠায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সঠিক তদন্ত দরকার।

অভিযোগে আরো বলা হয়, এবার জিন এয়ারকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ফাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদানের আয়োজন চলছে। এ জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে নিয়ে সভা করতে যাচ্ছে। যে সভায় জিন এয়ারকে বাণিজ্যিক ফাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। এরমাধ্যমে শর্ত ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক ফাইট চালিয়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ও সিভিল এভিয়েশন খাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য দায়ি জিন এয়ারকে পুরষ্কৃত করা হবে। আর এটা বিবেচনায় রেখে অনুমতি না থাকলেও কোম্পানিটি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত টিকেট বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। তাদের ফেসবুক পেইজে সিউল-ঢাকা ফাইট পরিচালনা ও টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে ফাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করেছে।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাকালের ব্যবস্থা এখনো চালু রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। এরপর শর্ত ভঙ্গকারি কোন কোম্পানি নতুন করে অনুমতি পেতে পারে না। কমিটিতে আসা অভিযোগ পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় দুই দেশে আটকে পড়া নাগরিকদের আনা-নেওয়ার জন্য ডিপ্লোম্যাটিক ফাইট পরিচালনার অনুমতি পায় জিন এয়ার। প্রতি সপ্তাহে একটি ফাইট পরিচালনার আগে অনুমতি নিতে হতো প্রতিষ্ঠানটিকে। কূটনৈতিক সুবিধায় পরিচালিত এই ফাইটের জন্য বিমানবন্দর কর, এম্বারকেশন ফিসহ বিভিন্ন ধরনের কর ও ফি মওকুফ করা হয়। তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে রয়ালটি ফি দেওয়ার কথা ছিল জিন এয়ারের। প্রতি টিকিটের বিপরীতে এই ফি সর্বনিম্ন ১০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। শর্ত ছিল, কোনো অবস্থাতেই বাণিজ্যিকভাবে এই ফাইট পরিচালিত হবে না। কিন্তু জিন এয়ার এসব শর্ত তো মানেনি, উল্টো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে রয়ালিটি ফি না দিয়েই ডিপ্লোম্যাটিক ফাইটের আড়ালে বাণিজ্যিক ফাইট পরিচালনা করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য কোম্পানির নিয়মিত ফাইট থাকা সত্ত্বেও গত তিন বছরে জিন এয়ারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অন্ততঃ পাঁচ মিলিয়ন ডলার বা ৫৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপ, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপ এবং বিমান বাংলাদেশ এই অর্থ পেত। এছাড়া কম বাজেটের এয়ারলাইনস হয়েও চড়া মূল্যে যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করেছে জিন এয়ার। ঢাকা থেকে সিউলের একক সরাসরি যাত্রায় যেখানে ৫৭ হাজার টাকায়ও টিকিট পাওয়া যায়, সেখানে জিন এয়ারের টিকিটের দাম শুরু হয় ৭৭ হাজার টাকা থেকে। এ ছাড়া চার্টার ফাইটের জন্যও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রাপ্য রয়ালটি ফি দিচ্ছে না জিন এয়ার। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি তাদের নজরে আসে এবং ওই ফাইট বন্ধের নির্দেশ দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও জিন এয়ারকে বাণিজ্যিক চার্টার ফাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়। এখন নিয়মিত ফাইট পরিচালনার অনুমতি নিয়ে চায় কোম্পানিটি।