শ্রীলংকার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ‘দুর্দান্ত’ ডেলিভারি নিয়ে চিন্তা না করে বরং পেস বোলিংয়ের সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পেসাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড।
তিনি জানান, সোজা লাইনে বল করতে পারা বোলাররাই বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের উইকেট থেকে সাহায্য পায়। ইনসুইং বা আউটসুইংয়ের মত দুর্দান্ত ডেলিভারি থেকে সুবিধা কম পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন সেশন চলাকালীন ডোনাল্ড বলেন, ‘এই ধরনের উইকেট এবং আমার অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তান-ভারত ও শ্রীলংকায় খেলাটা অনেক সহজ বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক দিনের অনুশীলনে নতুন বল কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি নিয়ে জোর দেয়া হয়েছে। যেখানে আমাদের হট জোন খুঁজে নিতে হবে এবং সেখানেই লম্বা সময় বোলিং করতে হবে। দুর্দান্ত ডেলিভারির, ইনসুইং, আউটসুইংয়ের দিকে তাকালে হবে না। আমাদের প্রক্রিয়াটা মানতে হবে।’
যেহেতু বাংলাদেশের উইকেটে কিছু ওভারের পর সুইং কাজ করে না, তাই এখানে উন্নতির জন্য রিভার্স সুইংয়ের উপর জোর দিতে বলেছেন ডোনাল্ড। পুরানো বলে কিভাবে জ¦লে উঠতে হবে বোলারদের তা শেখানোর চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড।
ডোনাল্ড বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, পুরানো বলে বোলিং। আজ পুরোটা জুড়েই ছিরো পুরানো বল। প্রত্যকটি অনুশীলন সেশনে, পুরানো বলে রিভার্স করা, অনেক বেশি ধৈর্য্যশীল ও নতুন কিছু করার উপর আমি অনেক বেশি জোর দিয়েছি। এই কন্ডিশনে ছেলেদের বোলিং করার কথা আমাকে বলতে হবে না। তারা জানে, কি আশা করছে। কিন্তু আমরা কতটা ধৈর্য্য ধরতে পারি, অধ্যবসায় ও নতুন কিছু করতে পারি কি-না, সেটির পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।’
তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে আগে কখনো দেখা না গেলেও ঘরের মাঠে টেস্টে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের পেসাররা। কিন্তু সাম্প্রতিকালের পারফরমেন্সে, ঘরের কন্ডিশনে স্পিনারদের পাশাপাশি পেসারদেরও ম্যাচ জয়ী হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
ডোনাল্ডের মতে, বড় ফরম্যাটের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারনে অতীতের নীতিকে ভেঙ্গে দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ওয়ানডেতে শরিফুলকে দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। আমি মনে করি আমার জন্য সবচেয়ে বড় চমক ছিল এবাদত এবং খালেদ। আমি তাদের ক্ষমতা দেখে বিস্মিত। পেস বোলিং হল অনেক বড় সাহস ও সংকল্পতা। আমি কখনও, টেস্ট ম্যাচে দুই স্পিনার এবং দুই পেসার দেখিনি, কিন্তু তারা যেভাবে নিজেদের মেলে ধরছে। বিশেষ করে ডারবানে তারা ছিল দুর্দান্ত।’
দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা পেসার ডোনাল্ড আরও বলেন, ‘আধঘণ্টার খারাপ সময় আমাদের পিছিয়ে দেয়। তবে আমি মনে করি, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টেই বোলিং প্রচেষ্টা দারুন ছিলো। আমি যা দেখেছি তাতে আমি আনন্দিত। আমি মনে করি, প্রত্যকটি একক অনুশীলন সেশনে আমরা যে আলোচনা করেছি এবং তা থেকে আমরা যা শিখতে পারি, সেটিই যথেষ্ট। আমরা যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি তাতে আমি সন্তুষ্ট।’
তাসকিনকে নিয়ে ডোনাল্ড বলেন, ‘তাসকিনের বিশাল হৃদয় আছে। বল হাতে আক্রমনে দেখলে, তাকে আমরা অনেক বেশি ক্ষুর্ধাত দেখতে পাবো। আমি যা দেখেছি, তাতে আমি এক্সাইটেড।’
টেস্টকে অগ্রাধিকার না দেয়ায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েও কথা বলেছেন ডোনাল্ড। ডোনাল্ড মনে করেন, কে কোন ফরম্যাটে খেলবে, এটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ।
আন্দ্রে রাসেলের উদাহরণ টেনে এনে ডোনাল্ড বলেন, ‘হয়তা এটি এমন কিছু হবে, যা নিয়ে আমরা মুস্তাফিজের সাথে কথা বলতে পারি। এটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। যখন আমি প্রথম নাইটসে (কলকাতা নাইট রাইডার্স) আমাদের হয়ে রাসেলকে খেলতে দেখেছিলাম, তখন আমি ভেবেছিলাম এই মানুষটি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। সে ১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করছে এবং ১১০ মিটার দূরে বল ফেলছে। তার শরীর টেস্ট ক্রিকেটের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তাই ছোট সংস্করনের ফরম্যাট বেছে নিয়েছে সে। এটি একটি ব্যক্তিগত পছন্দ। তাই আমি সেটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চাচ্ছি না।’
চট্টগ্রামে আগামী ১৫ মে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে। তথ্য সূত্র বাসস।