News update
  • Toxic chemicals can be detected with new AI method     |     
  • Fire breaks out at Sundarbans     |     
  • “Working to close gap that makes heated city unlivable for women”      |     
  • Guideline on heat-related illnesses to be launched tomorrow     |     
  • Flood-hit Kenya and Tanzania on alert as cyclone nears     |     

বিআরআই অথবা কোয়াড বৈদেশিক সম্পর্ক হবে জনগনের মতামতের ভিত্তিতে

খবর 2021-07-14, 3:44pm

belt-and-road-initiative-map-2540b6de17458fe9429d0f0a2c57281e1626255876.jpg




জুলাই ১৩, ২০২১ সকাল ১১ ঘটিকায় সাউথ এশিয়া ইউথ ফর পিস এন্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি কতৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক-বি.আর.আই. অথবা কোয়াড্’ (Bangladesh Foreign Relations: BRI or QUAD) শীর্ষক ওয়েবিনার এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আব্দুল ময়ীন খান, সাবেক মন্ত্রী এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইব্রাহীম,বীর প্রতীক। বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. সিরাজুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন, দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিক জনাব এ.বি.এম. শামসুদ্দোজা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংস্থার চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ময়ীন খান বলেন বাংলাদেশের বৈদেশিক স¤পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের মতামত প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি বি.আর.আই এবং কোয়াডের আলোচনায় বলেন দুইটি প্রচেষ্টারই অন্তনিহিত অর্থ একই, চীনকে তিনি বিশ্বের ২য় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ট্রেড প্রজেক্ট হিসাবে বি.আর.আই এর মূল্যায়নে তিনি বলেন ইতিমধ্যে MoU এর মাধ্যমে ১৩৮টি দেশ বি.আর.আই এর সাথে যুক্ত হয়েছে, অন্যদিকে কোয়াডের সাথে যুক্ত রয়েছে মাত্র ৪টি দেশ। আর করোনা মহামারীর সময়ে এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো ৩টি দেশ। তিনি বি.আর.আই এবং কোয়াডকে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের একটি চিরন্তন প্রতিযোগিতার অংশ হিসাবে উল্লেখ করেন, এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ বি.আর.আই এর সাথে থাকলে লাভবান হবে এই বিষয়টি যেমন সত্য তেমনই কোয়াডের বিষয়েও বাংলাদেশকে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে, বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে অবশ্যই চীনের সাথে বি.আর.আই এর মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জনমত তথা গনতন্ত্রের পুনপ্রতিষ্ঠার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন, তিনি দেশের মানুষকে আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সারাবিশ্বে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরাষ্ট্র কেন নেই সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করেন। বিশ্বায়নের এই যুগে যে রাষ্ট্র আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ এবং ক্ষতি করছে আমরা কি তার সাথেও বন্ধুত্ব রাখবো- বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন গনতন্ত্র এবং উন্নয়ন পাশাপাশি রেখে আমাদের পররাষ্ট্র নীতিকে দেশের মানুষের জনমতের ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, বি.আর.আই. অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া যা বাংলাদেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের পাশাপাশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তিনি বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক আঞ্চলিক শক্তিমত্তার সাথে নয্যতার ভিত্তিতে বজায় রাখতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইব্রাহীম বলেন বি.আর.আই. এবং কোয়াড বাংলাদেশের জন্য জটিল একটি পরিস্থিতি তৈরী করে তুলেছে এবং বাংলাদেশকে এজন্য অবশ্যই এ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশ বি.আর.আই. কিংবা কোয়াডের এর সাথে থাকলে কি কি ক্ষেত্রে লাভবান হবে সে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য চীন একটি অর্থনৈতিক শক্তি। আমাদেরকে ভাবতে হবে আমরা যদি কোয়াডে যাই তখন কি চীন আমাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সরিয়ে নিবে কিনা? যদি সরিয়েই নেয় তখন কি আমরা সেই অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরন করতে সক্ষম হবো? তিনি বলেন পাশ্চাত্যের সাথে আমরা যদি যাই, চীনের আগের মত আমাদেরকে এত অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে পারবে না। আমাদের পোষাক শিল্পের মূল বাজার হলো পাশ্চাত্য বিশ্ব। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বি.আর.আই. তে গেলে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পোষাকশিল্পের কি হবে? এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মূল চাবি চীনের হাতেই রয়েছে, এহেন সার্বিক বিষয় চিন্তা করে বাংলাদেশকে তার বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ধারন করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন যদি আমরা আজ পার্শবর্তী রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হই তাহলে কি চীন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে? যেমনটা মিয়ানমারের সাথে দাড়ায়। অতএব বি.আর.আই. এর মাধ্যমে বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক একটি নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, তিনি গত কয়েক বছর ধরে চলা জনগনের স্বার্থ বহির্ভূত পররাষ্ট্র নীতিকে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র নীতি হিসাবে তৈরী করার জন্য যৌক্তিকভাবে ক্ষমতার চর্চা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক স¤পর্কের ক্ষেত্রে বি.আর.আই. একটি নতুন সম্ভাবনাময় সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সাথে একক কোনো রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী ক্রিয়াকলাপ মোকাবেলায় বি.আর.আই. একটি সুবর্ন সুযোগ বলে তিনি মনে করেন।
বি.আর.আই. এর সকল সুযোগ সুবিধা অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সুব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত ভাবে দেশের জনগনের স্বার্থে গ্রহন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর ধারনার আলোকে স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি দূর করে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিভিল সোসাইটি এর গঠনমূলক মতামতের আলোকে দেশবাসীর মতামতের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র নীতি গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। ড. দিলারা চৌধুরী আরো বলেন, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকার মত পরাশক্তি রাষ্ট্রকে দূরে ঠেলে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বি.আর.আই. এবং কোয়াডের আলোচনায় তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশের উচিৎ জনগনের মতামত নিয়ে এই ধারনাগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বার্থ কতবেশি রক্ষিত হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। চীন কি আমাদের বন্ধু নাকি সাহায্যকারী দেশ এ বিষয়ের উত্তর এখন খোঁজার সময় হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। চীন-পাকিস্তান স¤পর্ক পরীক্ষিত বন্ধুত্বের স¤পর্ক যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যদিও চীন বেশ অনেকদিন যাবত বন্ধুত্বের বার্তা বাংলাদেশের প্রতি প্রেরন করছে। তিনি বাংলাদেশের অপমার জনসাধারন বিশেষত তরুন সমাজকে দেশের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভুরাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের যে সুন্দর অবস্থান সে বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে নিজস্ব ধ্যান ধারণাকে গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারন করতে হবে। তিনি বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকারর ট্রা¤প প্রশাসনের আমলে শ্বেতাঙ্গ জাতিবর্ন ধারণা ভারতের মোদী সরকারের হিন্দুত্ববাদী চেতনার সমালোচনা করে বলেন বাংলাদেশকে বি.আর.আই এবং কোয়াডের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যু, ভবিষ্যতের স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে শ্রমভিত্তিক পোশাকশিল্প যে হারিয়ে যাবে সে বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে বৈদেশিক স¤পর্ক নির্ধারনের চিন্তাভাবনা করতে হবে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকেও ভুললেও চলবে না। কোয়াড এখনো পূর্নাঙ্গ রূপ ধারণ করেনি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তিনি মূলত বলেন যে বি.আর.আই. অথবা কোয়াডের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজের মতামত প্রদানের অবস্থান খুবই সীমিত। তিনি বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে আরাম্ভ করে তিস্তা ব্যারেজের ন্যায় অনেক প্রকল্পে চীনের উপস্থিতিকে ভারতের জন্য মোটেও সুখকর নয় বলে মন্তব্য করেন।
মেজর (অব.) ব্যারিস্টার এম.সারোয়ার হোসেন বলেন বি.আর.আই. এবং কোয়াডের বিষয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন মূখ্য ভূমিকা পালনকারী দেশ, বাংলাদেশের স্বার্থকে মাথায় রেখে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চীনের বি.আর.আই. প্রকল্পকে গ্রহন করে কোয়াডের অন্তঃস্থ বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন বাংলাদেশে বর্তমানে ভারত যে আধিপত্যবাদী রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে সেখানে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের ভাষায় কোন গণতন্ত্র নেই। এদেশে আইনের শাসন, সামাজিক নিরাপত্তা বর্তমানে অনুপস্থিত।
পাকিস্তানের মত রাষ্ট্রে বর্তমানে গণতন্ত্র চর্চিত হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত। বাংলাদেশে ভারতের সাথে বর্তমান সরকার যত চুক্তি করেছে তা কখনোই জনগনের সামনে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে চুরির দায়ে অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিকের বিচার পর্যন্ত করা হয় নি।
দৈনিক ডেইলি স্টার সাংবাদিক জনাব শামসুদ্দোজা তার আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরে চীনের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি যে ঐতিহাসিক একটি বিষয় তার আলোকে বি.আর.আই. এর বিচার করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে পাশ্চাত্যের ধ্যান ধারনার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভাবিত। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে থাকে। উভয় বিষয় মাথায় রেখে বি.আর.আই ও কোয়াডের বিষয়টি পর্জালোচনা করতে হবে বলে তিনি অভিমত দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়লা ভিত্তিক শক্তিখাতে বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরশীলতা কমানো বি.আর.আই এবং কোয়াডে প্রতি কোন ইঙ্গিত কিনা সে বিশয়টি আমাদের ভাবতে হবে। কোন দেশের পররাষ্ট্র নীতি শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই নয় শাসক গোষ্ঠি ও বৈদেশিক প্রেক্ষাপটেও এ স¤পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যদিও বাংলাদেশের জন্য চীন কোন ধরনের ফাদ তৈরি করে নি তথাপি অন্যান্য রাষ্ট্রের আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
উক্ত ওয়েবিনারে অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি