News update
  • Metro rail services disrupted for power fault, passengers suffer     |     
  • UN Security Council condemns Jammu and Kashmir terror attack     |     
  • 250,000 mourners pay last respects to Pope Francis in 3 days      |     
  • US Restructuring Plan May Include World Bank, IMF & UN Agencies     |     
  • AL-BNP clash leaves over 50 injured in Habiganj     |     

ব্যাট ছাড়াই ইমরান শিবিরের অবিশ্বাস্য ইনিংস, নেপথ্যের রহস্য

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-02-12, 9:20am

untitled_1707705523-dc235c9c42064b489ff5e624f1f6dec81707708207.jpg




পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ঘোষিত ২৬৪ আসনের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি ১০১টি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই প্রার্থীদের ৯৩ জনই কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআইয়ের শক্ত অবস্থান ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, যা একটি নতুন মেরুকরণের সামনে দাঁড় করিয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতিকে।

অথচ এই নির্বাচন ঘিরে ইমরান খানের সামনে প্রতিবন্ধকতার শেষ ছিল না। পিটিআইয়ের ক্ষমতা খর্ব করতে সেনাবাহিনী তাদের প্রতিটি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। পিটিআইয়ের দলীয় 'প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট' বাতিল করা হয়েছে। কারাবন্দী করা হয়েছে ইমরান খানসহ দলের অন্য অনেক নেতাকেও। মূলধারার গণমাধ্যমেও জায়গা ছিল না পিটিআইয়ের। নেতাদের ওপর ছিল আনুগত্য পরিবর্তন কিংবা রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার প্রবল চাপ। সবমিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে পিটিআইকে মুছে ফেলার সব চেষ্টাই করা হয়েছে নির্বাচনের পুরো সময়জুড়ে।

কিন্তু সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে ভোটের মাঠে অবিশ্বাস্য এক ইনিংসই উপহার দিলেন পাকিন্তানের বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেন ইমরান খান ও তার পিটিআই শিবির। স্বতন্ত্রভাবে লড়েই জনপ্রিয়তার জোরে হারিয়ে দিলেন সেনা সমর্থনপুষ্ট নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগকে। অন্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ইমরান শিবির এখন সরকার গঠন করতে পারবে কি না, নাকি কূটনৈতিক তৎপরতায় ক্ষমতার গদিতে বসবেন নওয়াজ, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, চিরাচরিত সেনা দাপটকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইমরানের পিটিআই যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা পাকিস্তানের দীর্ঘ রাজনীতির ইতিহাসে অভাবনীয়ই বলতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শত প্রতিকূলতার মাঝেও নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা যে সাফল্য অর্জন করেছেন তার সবচেয়ে বড় কারণ, পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু এখনো কম-বেশি কার্যকর আছে। সে কারণেই নির্বাচন কমিশন সময়ে সময়ে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। এর বাইরে দেশটির বিচার বিভাগ নিজস্ব অবস্থান ধরে রেখে অন্তত গত দুই দশকে বিভিন্ন ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তাছাড়া এই নির্বাচন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে হয়নি। ফলে সামরিক বাহিনীসহ ক্রীড়ানক অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চাপ দিয়ে ভোটের মাঠ সবটা দখল করার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে হয় না। পক্ষান্তরে সেনা সমর্থনপুষ্ট নওয়াজ শরীফকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের ভোটের ক্ষমতা দেখিয়েছে পাকিস্তানের জনগণ। অনেকটা একই ঘটনা ঘটেছে বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টির ক্ষেত্রেও।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রচলিত সুবিধাবাদী রাজনীতিতে যে গোষ্ঠীগুলো আছে তার বিরুদ্ধে ইমরানের অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা। এর মধ্য দিয়ে অন্য গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের অনাস্থাও স্পষ্ট হয়েছে একইসঙ্গে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে এই ভোটে অংশ নিয়েছে; যাদের সমর্থন ছিল ইমরানের প্রতি।

অনেকের মতে, পাকিস্তানে যে নির্বাচনটা হয়ে গেল, তা ছিল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচন ছিল না। জনগণ এখানে দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে। পাকিস্তানে সামরিক রাজনীতির বিরুদ্ধে যে অনাস্থা, সেটার একটা প্রায়োগিক প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। দ্বিতীয়ত, ইমরান খানের যে জাদুকরী নেতৃত্বগুণ আছে বিরোধী দল হিসেবে কিংবা সরকারি দল হিসেবে- সেটাকে সম্মান করে পাকিস্তানের সমাজ। তাই বলা যায় এই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের সমাজে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিস্তর পরিবর্তন এসেছে।

রাজনীতিতে আসার পর থেকে ইমরানের সামনে সবসময় সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য ছিল। সেটা হলো সামরিকতন্ত্র থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করে নিয়ে আসা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য নির্ভরতা কমানো। সেইসঙ্গে আরেকটা বিষয় এসেছে। সেটা হলো ইমরান খান নিজে অভিজাত শ্রেণীর প্রতিনিধি হয়েও সাধারণের কাতারে নিজেকে নামিয়ে আনতে পেরেছেন। যেটা নওয়াজ শরীফ কিংবা বিলাওয়াল ভুট্টোর পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কিংবা অভিজাতরা বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও তা আদতে কার্যকর হয়নি। এছাড়া পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি প্রগতিশীল এবং বাস্তববাদী। তাদের আকুণ্ঠ সমর্থন ইমরান পেয়েছেন।