থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ডানপন্থী ধনকুবের ব্যবসায়ী অনুতিন চার্নভিরাকুল। আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।
গত সপ্তাহে আদালতের রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা পদচ্যুত হওয়ার পর ৫৮ বছর বয়সি এই রাজনীতিক তার স্থলাভিষিক্ত হলেন।
২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে শক্তিশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের ফিউ থাই পার্টি সরকারের শীর্ষ পদ দখল করে রেখেছিল। কিন্তু সম্প্রতি একটি ফোন কল ফাঁসের জেরে এই পরিবারের উত্তরসূরি পেতংতার্নকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত সপ্তাহে আদালত তার বিরুদ্ধেই রায় দেয়।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে আজ শুক্রবার থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অর্ধেকেরও বেশি ভোট নিয়ে ফিউ থাই দলের প্রার্থী চাইকাসেম নিতিসিরিকে হারিয়ে প্রধানমন্তী নির্বাচিত হন ভুমজায়থাই পার্টির নেতা অনুতিন চার্নভিরাকুল।
আজকের ভোটের আগে ফিউ থাই দল চাইকাসেম নিতিসিরিকে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে। সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিচারমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
তবে থাইল্যান্ডের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। গত কয়েক বছরে দেশটিতে আদালতের রায় ও সামরিক অভ্যুত্থানে একের পর এক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে।
অনুতিন এর আগে উপপ্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ২০২২ সালে গাঁজা আইনসিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য।
অনুতিনের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাইকাসেম নীতিসিরির পরাজয়কে ক্ষমতাসীন ফিউ থাই দলের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যে দলের একসময়ের অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয় নেতা ছিলেন প্রভাবশালী ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রা।
গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে থাইল্যান্ড ত্যাগ করে দুবাই চলে যান সিনাওয়াত্রা, যেখানে তিনি ১৫ বছরের বেশিরভাগ সময় স্বেচ্ছা নির্বাসনে কাটিয়েছেন। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়।
এরপর শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকসিন জানান, চিকিৎসার জন্য তিনি দুবাই গেছেন। তবে ৯ সেপ্টেম্বর আদালতের শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য দেশে ফিরবেন। ওই মামলায় তার আবারও কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
অনুতিন একসময় পেতংতার্নের জোটকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধের সময় তার আচরণে আপত্তি প্রকাশ করে ওই সমর্থন ত্যাগ করেন তিনি।
এ অবস্থায় একাই এগিয়ে গিয়ে অনুতিন সর্ববৃহৎ বিরোধী দল পিপলস পার্টির ১৪৩ আসনের সমর্থন পেতে সক্ষম হন। তবে তাকে শর্ত দেয়া হয়েছে, পার্লামেন্টকে চার মাসের মধ্যে ভেঙে নতুন নির্বাচন করতে হবে।
সিনাওয়াত্রাদের ফিউ থাই দল এখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করছে এবং আজকের ভোটের আগে পার্লামেন্ট ভাঙার জন্য রাজার কাছে চূড়ান্ত আবেদন করেছিল।
তবে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই জানান, রাজকীয় কর্মকর্তারা এ আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী প্রশাসন হিসেবে ফিউ থাই দলের এ পদক্ষেপ গ্রহণের বৈধতা নিয়ে ‘বিবাদমূলক আইনি সমস্যা’ রয়েছে।