
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
নির্বাচনের সূচি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দেশের ৩০০ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই সঙ্গে জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫-এর ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিস্তারিত কার্যক্রম ও তারিখ উল্লেখ করে সিইসি আরও বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর (সোমবার)। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ চলবে ৩০ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে ৪ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত।
আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি
রিটার্নিং অফিসারের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি (রোববার)। কমিশনে দায়েরকৃত আপিল নিষ্পত্তির সময়কাল ১২ জানুয়ারি (সোমবার) থেকে ১৮ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার)। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি (বুধবার)।
প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকে অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। প্রচারণা চলবে ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিলের তারিখ ১১ জানুযারি, আপিল শুনানি নিষ্পত্তির ১২ জানুযারি থেকে ১৮ জানুযারি; প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুযারি। প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুযারি, ভোটগ্রহণ ও গণভোট হবে ১২ ফ্রেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
ভোটার সংখ্যা
এবার দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন ও নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হয়েছে, তাদের নিয়েই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাও পোস্টাল ব্যলটে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এবার। এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারের বিপরীতে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে ইসি। জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে হওয়ায় ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সময় বাঁচাতে একটি কক্ষে রাখা হয়েছে দুটি গোপন বুথ।
সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। সবার প্রতি আমার আহ্বান আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সফল করে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখুন।’
সাধারণত বিটিভি ও বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এবার সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি নির্বাচনের তফসিল একই সঙ্গে ঘোষণা করা হলো।
এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের ভাষণ রেকর্ড করা হয়।
তফসিল রেকর্ডের আগে ভোটের তারিখ নির্ধারণে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বুধবার দুপুরে বঙ্গবভবনে যান সিইসি। ইসি সচিব জানান, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তার আগে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিইসি। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, আসন্ন নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদলে বা বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য মাঠ পর্যায়ে বিচারকদের প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ জন বিচারক চাওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল ইসি।