News update
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     
  • CPJ denounces Trump administration's action against AP     |     

পুলিশ সার্ভিসের বিবৃতি কি বেনজীর ও আছাদুজ্জামান মিয়াকে ‘সুরক্ষা’ দেবার চেষ্টা?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক পুলিশ 2024-06-22, 10:00pm

rgretert-5adea2b685fa06c647bb4956e444223a1719072038.jpg




বাংলাদেশের গণমাধ্যমে দেশটির পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোকে ”উদ্দেশ্যমূলক ও অতিরঞ্জিত” বলে অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

শুক্রবার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়।

যার শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ করা হয় - "বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের প্রকাশিত বা প্রচারিত অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রসঙ্গে"।

সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের "অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতি" নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। পরবর্তীতে অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর শিরোনাম হয়।

কয়েকদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার 'অঢেল সম্পদ' নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পুলিশের এই দুই সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে এই বিবৃতি দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএস এ) সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা কোনো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ব্যক্তিকে 'মিন' (নির্দেশ) করে বলেননি।

বরং 'তথ্যসূত্র ও প্রমাণ ছাড়া' প্রচারিত বা প্রকাশিত 'উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মানহানিকর' সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে দাবি তার।

আদালতের নির্দেশে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের কিছু সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসেব এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনও জ্ঞিাসাবাদের জন্য মি. বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের তলব করেছে। কিন্ত তারা এখনো হাজির হয়নি।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের সাবেক পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ‘বিপুল সম্পদ’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তরফ থেকে এখনো কোন পদক্ষেপ আসেনি।

বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক মহাপরিদর্শক মো. নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, "পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখা অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্ব।"

তাই, "কোনো তথ্য প্রমাণহীন অভিযোগ যদি উঠে থাকে, সেটার প্রতিবাদ তারা করতেই পারে।"

অন্যদিকে এই প্রেস রিলিজটাকেই 'উদ্দেশ্যমূলক' বলছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

"এতে প্রমাণ হয় বাহিনীর মধ্যেই দুর্নীতির সুরক্ষাকারী একটা চক্র আছে," বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

বিবৃতিতে কী বলা হয়েছে?

বিপিএসএর সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি গণমাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের উদ্দেশ করে লেখা।

তাতে বলা হয়েছে, "সাম্প্রতিক সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রচারিত অতিরঞ্জিত রিপোর্ট সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

এ ধরনের আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঢালাওভাবে প্রচারিত/প্রকাশিত অতিরঞ্জিত রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।"

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, "গণতন্ত্র ও দেশবিরোধীচক্রের নাশকতা প্রতিহত করার কারণে তারা পুলিশকে "প্রতিপক্ষ" বিবেচনা করে নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত।

"বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসীরাও" সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে "মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত" উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম তাদের(বিদেশে পলাতক সাইবার সন্ত্রাসী) "অনুকরণ" করছে।

এর অংশ হিসেবে গণমাধ্যমগুলো, "পুলিশের বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্য সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে, যা বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার হীন উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে" বিসিপিএ'র কাছে।

আরো বলা হয়, "গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের রিপোর্টের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন তথ্যসূত্রের উল্লেখ নেই।"

রিপোর্টগুলোকে "বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অতি কথিত" বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে।

এসবের মধ্যে "কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ" এর "ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থ" হাসিলের প্রচেষ্টা রয়েছে বলেও মনে করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

"যা সাংবাদিকতার নীতিমালা বিরোধী," বলছে সংগঠনটি।

তারা বলছে, "কী কারণে, কার উদ্দেশ্য হাসিল এবং কার ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় মিডিয়া বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুৎসা রটনায় লিপ্ত, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা অযৌক্তিক নয়।"

'প্রেস রিলিজটাই উদ্দেশ্যমূলক'

বাংলাদেশে এর আগেও পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে এমন অবস্থান নিতে সচরাচর দেখা যায় না।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রাসেল বিবিসি বাংলাকে বলেন, দুর্নীতিটা তো প্রমাণ করা লাগবে, ঢালাওভাবে কেউ কাউকে দুর্নীতিবাজ বলে দিতে পারে না।

মি. রাসেল বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার আছেন দাবি করে তিনি বলেন, "যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠে, সেটা তদন্ত করার ব্যাপার আছে, নিশ্চিত হওয়ার একটা প্রক্রিয়া আছে, কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই, কেউ কেউ দুর্নীতিবাজ বলে দিচ্ছেন।"

এ কারণেই বিপিএসএ বিবৃতি দিয়েছে বলে জানান, গোলাম মোস্তফা রাসেল।

বিপিএসএ তাদের বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বললেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফেতখারুজ্জামান, এই প্রেস রিলিজ দেয়াটাকেই "উদ্দেশ্যমূলক" বলে মনে করেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বরং তাদের এই প্রেস রিলিজটাই হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করার অশুভ উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে।"

"বিবৃতিদাতা এবং অভিযুক্তরা একই গোত্রভুক্ত" উল্লেখ করে মি. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "তারা চাচ্ছে তাদের সহযোগীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। তারা প্রমাণ করছে তারা আসলে দুর্নীতির সহায়ক।"

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ নুরুল হুদা বলছেন, সার্ভিস এসোসিয়েশনের কাজ পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখা।

তিনি বলেন, "যদি কোনো পক্ষ মনে করে মানহানি হয়েছে তারা বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। সেটা ঠিক কি বেঠিক সেটা তো অনুসন্ধান সাপেক্ষ।"

"যদি মনে করে থাকে আনফাউন্ডেড অ্যালিগেশন (ভিত্তিহীন অভিযোগ) করা হচ্ছে, তাহলে তো তারা বলতেই পারে," যোগ করেন তিনি।

মি. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, "বিপিএসএ'র বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বসে পড়ার মুখে এটা উপলব্ধি করতে পারছে না পুলিশ বাহিনী।"

"বরং বার্তাবাহককে আঘাত করা তাদের মূল উদ্দেশ্য," বলেন তিনি।

পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতির চিত্র

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, "অতিরঞ্জিত সংবাদে" বাহিনীটির "ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার" চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে এ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়।

দেশের সেবা খাতগুলোর মধ্যে দুর্নীতির সার্বিক অবস্থান জানতে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা-টিআইবি দু’তিন বছর পর পর জরিপ করে।

সর্বশেষ ২০২২ সালে যে জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করে টিআইবি, সেখানে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশকে।

সাবেক আইজিপি থেকে শুরু করে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের খবর আসছে গণমাধ্যমগুলোতে।

এরমধ্যে কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার রায়ও রয়েছে। কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসার পরপর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ডিআইজি থেকে শুরু করে প্রায় দশজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাদের তদন্ত চলছে।”

এই ঘটনা প্রবাহের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “হাতে গোনা কয়েকজন বাদে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। সিংহভাগই দুর্নীতির সাথে জড়িত।”

সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, অনেক খাতেই অসঙ্গতি রয়েছে।

একেক পেশায় একেক ধরনের অপরাধ বা দুর্নীতির আধিক্য দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পুলিশ বাহিনীর ক্ষেত্রে আর্থিক অপরাধের চেয়ে মানবাধিকার সংক্রান্ত অপরাধগুলো বেশি সংঘটিত হয়"। বিবিসি বাংলা