পাহাড়ের কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা; যার নৈপুণ্যে বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে এশিয়া কাপের মঞ্চে। এর আগেও তার গোলে দ্বিতীয় বারের মত সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। তার হাতে উঠেছিল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের ট্রফি। অথচ তার পরিবার ভাসছে অথৈ সাগরে। ঋতুর মা যে মরণব্যাধি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার ব্যয় বহনে হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার। এই রত্নগর্ভাকে সুস্থ করে তুলতে সরকারের সহায়তা চাইলেন স্বজনরা।
রাঙ্গামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। যার নৈপুণ্য নেপালের দশরথ থেকে শুরু করে মিয়ানমারের থুউন্না স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শককে করেছে মন্ত্রমুগ্ধ। যার এনে দেয়া সাফল্যে আনন্দের জোয়ারে ভেসেছে ৫৬ হাজার বর্গমাইল, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাটুরিয়া। তার জোড়া গোলেই পরাস্ত হয়েছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ স্থান করে নিয়েছে এশিয়া কাপে। অথচ সেই ঋতুপর্ণা ১৮ কোটি মানুষের মনে আনন্দ বিলিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়সম কষ্ট বুকে নিয়ে। এই পাহাড়কন্যা শুধু মাঠেই নয়, লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের জন্যও। মা ভূজপতি চাকমা দেড় বছর ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন ক্যান্সারে সাথে। কেমোথেরাপির প্রভাবে ঝরে পড়ছে মাথার চুল। সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি এখন বসে থাকেন মনমরা হয়ে। ঋতু পুরো দেশকে আনন্দে ভাসালেও তার পরিবারের ওপর বিষাদের কালো ছায়া। ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে স্বজনরা।
ঋতুর মেজো বোন পুতুলি চাকমা বলেন, 'মা খুবই অসুস্থ। তাই আমরা আমাদের সংসার রেখে মায়ের সাথে আছি। যন্ত্রণায় মা ঘুমাতে পারেন না।'
তিনি আরো বলেন, 'ডাক্তার বলেছেন আগে মাকে ৮টি কেমোথেরাপি দিতে হবে। তারপর অবস্থার উন্নতি হলে তখন সিদ্ধান্ত নেবেন আপারেশন করা যাবে কিনা। এরই মধ্যে ৩টি কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। তাতে খরচ হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আরো কত টাকা লাগবে জানি না। আমাদের হাতে তো টাকা নাই। মায়ের চিকিৎসা কীভাবে হবে জানি না।'
সেজো বোন পাম্পি চাকমা বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ, ঠিকমতো নিজের সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। মাকে সাহায্য করতে পারি না। ঋতুর আয়ে মা'র সংসার চলে।
কিন্তু ঋতু ঠিক মত বেতন পান না বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমার বোন তো দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। নারী ফুটবল দলকে এগিয়ে নিতে অবদার রাখছে। আজ তার মা কিভাবে চিকিৎসা নেবেন সেজন্য আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি যাতে আমাদের মাকে বাঁচাতে আমাদের পাশে দাড়ান। আর্থিক সহায়তা করুন যাতে মা আমাদের মাঝে থাকেন।'
ঋতুর ভগ্নিপতি সুদীপ চাকমা বলেন, '২৪ জুলাই আমার শাশুড়িকে চতুর্থ দফায় কেমোথেরাপি দিতে হবে। সেই টাকা কিভাবে জোগাড় হবে তা চিন্তায় আছি।'
ঋতুর মা ভূজপতি চাকমা বলেন, 'আমি অসুস্থ, রাতে ঘুমাতে পারি না, খুব কষ্ট হয়। খেতে পারি না। বুকে প্রচন্ড ব্যথা করে। কি রোগ হলো জানি না। তারপরও অনেক কষ্টে ঋতুর খেলা দেখেছি। আমার খুব ভাল লাগছে। আমার একটাই চাওয়া, একদিন ঋতু দেশের হয়ে নারী ফুটবল বিশ্বকাপে খেলবেন। এশিযা কাপে ভালো খেলে যাতে বিশ্বকাপ খেলতে পারে সেজন্য দেশের সকলে ওদের জন্য আশির্বাদ করবেন।'
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেন, 'ঋতুর মায়ের এমন অবস্থা সেটা সে আমাদের জানায়নি। গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। আমরা ঋতু ও তার পরিবার সাথে দ্রুতই যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপশি সরকারে উচ্চ মহলকেও অবহিত করবো। যাতে অর্থভাবে চিকিৎসার কোন ত্রুটি না হয়।'
বাবা, মা, ৪ বোন আর ১ ভাই নিয়ে ছিল ঋতুপর্ণার পরিরার। যার মধ্যে ২০১৫ সালে লিভার ক্যানসারে বাবা বরজ বাঁশি চাকমা ও ২০২২ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান একমাত্র ভাই পার্বণ চাকমা।