News update
  • Govt to cut savings certificate profit rates from January     |     
  • Gold prices hit fresh record in Bangladesh within 24 hours     |     
  • Election to be held on time, Prof Yunus tells US Special Envoy     |     
  • Moscow wants Dhaka to reduce tensions domestically, also with Delhi     |     
  • Saarc experts meet to reduce livestock-origin greenhouse gases     |     

হাকালুকি হাওরে টর্নেডো: পানির স্তম্ভ উঠে গিয়েছিল আকাশের দিকে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিপর্যয় 2022-07-24, 9:25pm

হাকালুকি হাওরের টর্নেডোর যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়



বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে তৈরি হওয়া টর্নেডো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে পানিতে তৈরি হওয়ার কারণে এটি খুব বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি বলে প্রাথমিকভাবে তারা মনে করছেন।

শনিবার বিকালে হাকালুকি হাওরে তৈরি হওয়া ওই টর্নেডোর ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।

তবে হাকালুকি হাওরের ওই টর্নেডোতে কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানা যায়নি।

হাকালুকি হাওরের টর্নেডো

ভিডিওতে দেখা যায়, হাকালুকি হাওরের পানির ভেতর থেকে লম্বা একটা পানির স্তম্ভ আকাশের দিকে উঠে গেছে। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করে বিজলি চমকে গর্জন করছে। পানির সেই স্তম্ভটি হাওরের পানি টেনে নিয়ে নড়াচড়া করছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ওই টর্নেডোর ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন। সেসব ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যে ভিডিওটা দেখা গেছে, সেটা টর্নেডো বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখন এই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করেছি।

টর্নেডোটি হাওরে এক ঘণ্টার মতো স্থায়ী ছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শনিবার বিকালে হাওরের সেই টর্নেডো দেখেছেন ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি বলছেন, ''বিকালে হাওরের পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পাই, দূরে পানির মধ্যে একটা সরু রেখা উপরে উঠে গেছে। এরকম দৃশ্য আর কখনো দেখি নাই। ঘণ্টা খানেক পরে অন্ধকারে সেটা মিলিয়ে যায়।''

এ ধরনের টর্নেডো অনেক সময় ১০/১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয় এবং ঘণ্টায় ৬০ থেকে শুরু করে ২০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে।

মি. চৌধুরী বলছেন, শুধুমাত্র পানির ওপরে টর্নেডো তৈরি হলে সেটা ততটা শক্তিশালী হয় না। কিন্তু স্থলে হলে বা পানি ও ভূমি মিলে টর্নেডো তৈরি হলে সেটা অনেক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী বলছেন, ''এ ধরনের টর্নেডো পানি টেনে নিয়ে ওপরে তুলে মেঘ তৈরি করে। পরে সেটাই আবার বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। অনেক সময় আকাশে পানি তুলে সেটা আবার ছেড়ে দেয়।''

''অনেক সময় এরকম টর্নেডোর সঙ্গে পানিতে থাকা মাছও উপরে উঠে যায়। পরে সেটাই আবার বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে পড়তে দেখা যায়।''

তিনি ধারণা করছেন প্রচণ্ড গরমের কারণে হাওরের পানির ওপরের তাপমাত্রা কমে ওপরে উঠে যাওয়ার কারণে সেখানে টর্নেডোর তৈরি হয়েছে। সেই সময় আশেপাশের শীতল হাওয়া সেই শূন্যতা পূরণ করতে আসায় একটি ঘূর্ণির তৈরি হয়। এভাবে টর্নেডো তৈরি হয়।

তবে হাকালুকি হাওরের ওই টর্নেডোতে কোন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানা যায়নি।

বাংলাদেশে টর্নেডো

সাধারণত উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশে টর্নেডোর প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও অন্যান্য মহাদেশগুলোতেও টর্নেডো হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে কম হলেও অতীতে টর্নেডোর ইতিহাস রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় যেমন সমুদ্রে উৎপত্তি হয় টর্নেডোর ক্ষেত্রে তা নয়, বরং এটি যে কোন জায়গাতেই হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিবছর টর্নেডোর কথা শোনা যায়।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঞ্চলে টর্নেডো বেশি হয়ে থাকে।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো হয়েছিলো মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ১৯৮৯ সালের ২৬শে এপ্রিল।

ওই টর্নেডোতে মারা গিয়েছিলো এক হাজারের বেশি মানুষ আর আহত হয়েছিলো আরও অন্তত দশ হাজার মানুষ।

স্থানীয়দের বর্ণনায় সেদিন বিকেল পাঁচটার দিকে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো সাটুরিয়া।

এছাড়া ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং ২০১৪ সালে নেত্রকোনায় বড় ধরনের টর্নেডো হয়েছিল। তবে প্রতিবছর দেশের সব এলাকাতেই ছোটখাটো টর্নেডোর কথা প্রায়ই শোনা যায়।

মূলত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে টর্নেডো, কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি বা বর্জ্রসহ শিলাবৃষ্টির মতো বিষয়গুলো দেখা যায়।

টর্নেডো কীভাবে তৈরি হয়?

সাধারণত কোন স্থানে নিম্নচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টি হলে ওই স্থানের উষ্ণ বাতাস উপরের দিকে উঠে যায় এবং তখন ওই শূন্য জায়গা পূরণের জন্য চারদিকের শীতল বাতাস দ্রুত বেগে ধাবিত হয়। কালবৈশাখীর মতো এভাবেই টর্নেডোর উৎপত্তি হয়।

টর্নেডো হচ্ছে বাতাসের ভর, যা একটি ঘূর্ণি আকারে উচ্চ কৌণিক বেগে তৈরি হয়। এর এক মাথা থাকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে, অন্য অংশ থাকে কিউমুলোনিম্বাস মেঘের ভেতর।

এটি প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকে।

অল্প সময়ের জন্য তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় গতিপথে যা পড়ে, সব কিছু নিজের ভেতর টেনে নিতে থাকে এবং ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। এই সময় যা কিছু পথে পড়ে, সব কিছু ভেঙ্গেচুরে টর্নেডো এগোতে থাকে।

আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টর্নেডো দেখতে সরু ফানেলের মতো হয়, যার চিকন অংশটি ভূমি স্পর্শ করে। যদিও টর্নেডো বিভিন্ন আকার কিংবা আকৃতির হতে পারে।

অনেক সময় একটি টর্নেডো থেকে একাধিক টর্নেডো তৈরি হতে পারে যাকে টর্নেডো পরিবার বলা হয়।

কালবৈশাখি, সাইক্লোন ও টর্নেডোর পার্থক্য

সাইক্লোন ও টর্নেডো- দুটোই ঝড়। উভয় ঝড়ই ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরতে থাকে।

তবে দুটোর মধ্যে বড় পার্থক্য হলো, টর্নেডো হচ্ছে বাতাসের লম্বা কলাম। একটি নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে হয়ে থাকে।

টর্নেডো যেকোনো স্থানেই তৈরি হতে পারে। তবে সাইক্লোন তৈরি হয় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে।

সাইক্লোন তৈরির আগে থেকেই লঘুচাপ, নিম্নচাপ ইত্যাদি পর্যায় পার হয়ে আসে বলে একটি পূর্বাভাস পাওয়া যায়। কিন্তু টর্নেডোর ক্ষেত্রে সাধারণত কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে এ ধরনের টর্নেডো তৈরি হতে পারে।

তবে সাইক্লোন যেমন বিশাল এবং বিস্তৃত এলাকা নিয়ে তৈরি হয়ে থাকে, টর্নেডো তা হয় না। সাধারণত টর্নেডোর সর্বোচ্চ আকার ১০/১২ কিলোমিটার হতে পারে ।

সাইক্লোনের তুলনায় এর স্থায়িত্বও খুব কম হয়ে থাকে। সাইক্লোন যেখানে সপ্তাহব্যাপী হতে পারে, সেখানে একটা টর্নেডো কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী হতে পারে।

কালবৈশাখির সঙ্গে টর্নেডোর একটি পার্থক্য হলো ঝড়ের গতিবেগ।

কালবৈশাখী ঝড়ের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটারের বেশিও হতে পারে।

কিন্তু টর্নেডোর সময় বাতাসের গতিবেগ থাকে ৬০-২০০ কিলোমিটার কিংবা কখনো কখনো এর চেয়ে বেশিও হয়ে থাকে।

কালবৈশাখী ঝড় একেবারে হুট করে হয় না এবং ঝড়টি বেশ কিছুটা সময় ধরে থাকে। ঈশান কোণে জমা হওয়া কালোমেঘ এ ঝড়ের আভাস দেয়।

অথচ টর্নেডো হতে পারে মূহুর্তের মধ্যে এবং তা হতে পারে খুবই অল্প সময়ের জন্য। কালবৈশাখী ঝড়ের উপাদান টর্নেডো তৈরিতে ভূমিকা রাখে বলে আগে থেকে টর্নেডো সম্পর্কে আঁচ করা যায় না ।

টর্নেডোর পূর্বাভাস ও টর্নেডোতে যা করবেন

মৌসুমি টর্নেডোর পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। টর্নেডো নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে সাধারণ বজ্রঝড়ের প্রকৃতি দেখে অনেক সময় টর্নেডোর সতর্কতা দেয়া হয়।

টর্নেডো সব তছনছ করে দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা টর্নেডোর সময় লোকজনকে বাড়ির বেজমেন্টে থাকার পরামর্শ দেন।

কিন্তু বাংলাদেশে তেমন বেজমেন্টসহ বাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় এখানে যতটা সম্ভব শক্ত বাড়িঘর বা ভবনের ভেতর থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে কোনভাবেই টর্নেডোর কাছাকাছি যাওয়া উচিত নয় বলে আবহাওয়াবিদরা। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।