News update
  • UNRWA Situation Report on Crisis in Gaza & Occupied West Bank     |     
  • Intimidation or bloodshed cannot halt Bangladesh’s march to democracy     |     
  • Khaleda Zia integral to an important chapter in BD history: Yunus     |     
  • Enthusiasm marks Victory Day celebrations across Bangladesh     |     
  • Dhaka-Delhi ties deep; to be shaped by trust, dignity, mutual respect     |     

দেশের বিজ্ঞাপনের বাজার আসলে কত বড়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ব্যবসায় 2024-09-27, 6:53pm

dgfgretret-ea2e81b836178cbe2a57708fafdc18fb1727441630.jpg

বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের লোগো। ছবি: সংগৃহীত



আয়তনে ছোট হলেও প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এ দেশ কিন্তু বাজার হিসেবে ছোট নয়। অন্য সব খাতের মতো দেশের বিজ্ঞাপন জগত ঘিরেও এখানে চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক (টেলিভিশন) মিডিয়াকে মূলত বিজ্ঞাপনের বাজারের মূল মাধ্যম মনে করা হয়। তবে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার জয়জয়কারের যুগে বিজ্ঞাপনদাতারা ঝুঁকছেন ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দিকেও।

এ খাতে সংশ্লিষ্ট রয়েছে শত শত প্রতিষ্ঠান, যেখানে কর্মসংস্থান হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। তবে দেশের বিজ্ঞাপন-বাজারের আকার সম্পর্কে বোধ হয় কারোরই সুস্পষ্ট ধারণা নেই। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রচলিত প্রিন্ট ও টেলিভিশন মাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

মূলত বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন-বাজার সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক জরিপ না থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে একটি হিসাব বের করে। দেশের অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন বেসরকারি আর্কাইভস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রায়ান আর্কাইভস তার গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের তথ্য সংগ্রহ এবং এর বাজার মূল্য জরিপ করে। প্রকাশিত ও প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে তারা মূলত এ বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য নিরূপণ করে।  

প্রতিষ্ঠানটি তাদের জরিপে ২০২৩ সালে দেশের ৮৮টি দৈনিকে মোট ৪ হাজার ২১৫ জন বিজ্ঞাপনদাতাকে খুঁজে পায়। এসব বিজ্ঞাপনদাতার মোট বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৪টি। সেখানে মোট ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ইঞ্চি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। বিজ্ঞাপনের রেট অনুযায়ী যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। 

একই বছর দেশের ৩৬টি টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর জরিপ চালিয়ে রায়ান আর্কাইভস মোট ৮৬৪ জন বিজ্ঞাপনদাতাকে শনাক্ত করে। টিভি চ্যানেলগুলোতে এ বিজ্ঞাপনদাতারা সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপন দেন ১ কোটি ৬ লাখ ৯১ হাজারটি। এর বাজারমূল্য ৫ হাজার ১৬৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রিন্ট ও টিভিতে ২০২৩ সালে দেয়া বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য প্রায় ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।

একই প্রতিষ্ঠানের জরিপে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দেখা যায়, দেশের প্রধান প্রধান ৯২টি পত্রিকাতে মোট ৩ হাজার ৯৯৭ জন বিজ্ঞাপনদাতা মোট ২ লাখ ৩ হাজার ৮৯টি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। যার মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার কলাম ইঞ্চি। এ বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য ২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে, একই বছর মোট ৩৫টি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনদাতার সংখ্যা ছিল ৮৩৩। মোট বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ১ হাজারের মতো, যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫ হাজার ৭৫৭ কোটি কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই বছর সব মিলিয়ে প্রিন্ট ও টেলিভিশন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা খরচ করেন ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা। 

এ হিসাবটি মূলত দেশের প্রিন্ট ও টেলিভিশন মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিজ্ঞাপনের। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপনের হিসাবও এখানে তুলে ধরা হলো। যদিও এ সংখ্যাটিই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে দেশে বিজ্ঞাপনের বাজার সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা সঙ্কুচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কোভিড মহামারি এবং তার পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব দেখা যাচ্ছে দেশের বিজ্ঞাপন খাতেও। গত কয়েক বছর ধরেই বিজ্ঞাপনের বাজারদর বাড়েনি; বরং ক্ষেত্রবিশেষে হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের একটি বিশাল অংশ বর্তমানে প্রচলিত বিজ্ঞাপনমাধ্যম হিসেবে পরিচিত প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বদলে চলে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞাপনের প্রচলিত মাধ্যমে দেয়া বিজ্ঞাপনের বাজার সঙ্কুচিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর প্রমাণ রায়ান আর্কাইভসের ২০১৮-এ করা এ সংক্রান্ত জরিপ। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সালে টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য ছিল সাত হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকার৷

পাশাপাশি সে সময় বাজারে বেশ ভালো চাহিদা থাকায়  এফএম রেডিওতে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছে ১৮৯ কোটি টাকার৷ এতে এ তিন মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ওই জরিপ অনুযায়ী ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রিন্ট ও টেলিভিশন মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বাজার বেশ সঙ্কুচিত হয়েছে।

দেশের অন্যতম পুরনো ও খ্যাতনামা বিজ্ঞাপনী এবং জনসংযোগ ও কমিউনিকেশন্স প্রতিষ্ঠান ট্রিউন গ্রুপ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজনেস ম্যাগাজিন ‘এশিয়া বিজনেস আউটলুক’ ২০২৩ সালে এশিয়ার শীর্ষ ১০ বিজ্ঞাপনী সংস্থার সম্মানজনক তালিকায় স্থান পেয়েছে।

দেশের বিজ্ঞাপনের বাজার সম্পর্কে সময় সংবাদকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না, এটা একটা সমস্যা। এ খাতসংশ্লিষ্ট কেউই তথ্য দেয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়। তাই বাজারের ভলিউম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়াটা একটু কঠিনই বটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ চলে আসায় বর্তমানে প্রচলিত বিজ্ঞাপন-বাজারের একটা বড় অংশ চলে গেছে ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথা ডিজিটাল মিডিয়ায়। দিন দিন এ প্রবণতা আরও বাড়ছে। পাশাপাশি আগে আউটডোর মিডিয়া যেমন বিলবোর্ডে মানুষ বিজ্ঞাপন দিত, এখন সেই জায়গা কমে এসেছে; বরং সে জায়গাটা নিচ্ছে এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। 

টিভিতে এখনও বিজ্ঞাপনের চাহিদা ভালো রয়েছে। তবে প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের বাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। বলা যায়, আজ থেকে পাঁচ সাত বছর আগে প্রিন্ট মিডিয়া যে মার্কেট শেয়ার পেত, তার শেয়ার এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে; অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এ কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি মানুষের আগ্রহও কমেছে।

ওয়াহিদুল আলম আরও বলেন, আগে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকাও কমে গেছে। বিজ্ঞাপনদাতারা সরাসরি মাধ্যমগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে টেলিভিশন মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দাতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এমনকি প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা বাড়ছে। বিজ্ঞাপন খাতে এজেন্সিগুলোর সংশ্লিষ্টতা এভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তবে ইউনিলিভারের মতো বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও তারা তাদের বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে এজেন্সিগুলোর ওপর নির্ভর করে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আগে যেমন দেখা যেত বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোই আগে ক্রিয়েটিভ এজেন্সি হিসেবে কাজ করতো, আবার মিডিয়া বায়িংয়ের কাজও করতো। এখন এক ধরনের এজেন্সি রয়েছে, যারা শুধু মিডিয়া বায়িং করে। আর ক্রিয়েটিভ এজেন্সি আলাদা হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞাপন জগতের আগের দিন আর নেই। মার্কেটে এখন ভেরিয়েশন চলে এসেছে।

ওয়াহিদুল আলম দেশের বিজ্ঞাপন জগতের ব্যবসার আকার নিয়ে বলেন, টিভি ও প্রিন্টের বিজ্ঞাপনের বাজার সম্পর্কে ধারণা করা গেলেও বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিশাল একটি অংশ চলে যায়। যেটার প্রকৃত পরিমাণ কতো তা জানাটা একটু কঠিনই বটে। 

এদিকে, বিজ্ঞাপন জগতে গত কয়েক বছর ধরেই এক ধরনের মন্দাভাব চলছে উল্লেখ করে ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিজ্ঞাপনের রেট গত কয়েক বছর ধরে এক জায়গাতেই থেমে আছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও বিজ্ঞাপনের রেট বাড়েনি। বিশেষ করে কোভিড মহামারির পর থেকেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে তাদের বাজেট খুব একটা বাড়াননি।

দেশের বিজ্ঞাপন-বাজার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন-বাজারটা একটু অন্য ধরনের। ভারতে কোম্পানি বেশি, প্রতিযোগিতাও বেশি, আবার বিজ্ঞাপনের পরিমাণও বেশি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের পণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্যও বিজ্ঞাপনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের দেশে মার্কেটিংয়ের বদলে বিজ্ঞাপনদাতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রয়োজনেই মূলত বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। মার্কেটিংয়ের জন্যই বিজ্ঞাপন দেয়ার উদ্দেশ্য বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতার। প্রমোশনের জন্য তাদের খুব একটা উদ্দেশ্য থাকে না।  সময় সংবাদ