News update
  • FAO Warns of ‘Silent Crisis’ as Land Loss Threatens Billions     |     
  • Indices tumble on both bourses amid broad-based sell-off     |     
  • BNP Names 237 Possible Candidates for Polls     |     
  • Bangladeshi leader of disabled people of world Dulal honoured     |     
  • UN Report Warns Inequality Fuels Global Pandemic Vulnerability     |     

যে দেশে মুসলিমদের মরদেহ দাফন করা কঠিন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক মিডিয়া 2024-02-05, 1:48pm

jhguyiu8oiu-686701f6a0f8e02e270e2ed7bbd5301d1707119313.jpg




জাপানে মুসলিমরা খুবই ছোট একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। মাত্র লাখ দুয়েক মুসলিম নাগরিকের বাস দেশটিতে। তবে এই দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি।জাপানি নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই মৃতদেহ বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা শিন্তো রীতি অনুযায়ী পুড়িয়ে ফেলে। কাজেই মুসলিমরা সেখানে কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে গেছে। ইসলামে মরদেহ পোড়ানো নিষিদ্ধ এবং মুসলিমরা সাধারণত তাদের মরদেহ মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাফন করে থাকে।অনেক পরিবার মরদেহকে যথাযথভাবে ইসলামী রীতি অনুযায়ী কবর দেওয়ার জন্য শত শত কিলোমিটার দূরে যেতে বাধ্য হয়। “তারপরও আমার নিকটাত্মীয় কাউকে হয়ত মৃত্যুর পর পুড়িয়ে ফেলতে হতে পারে, এই চিন্তায় আমি রাতে ঘুমাতে পারি না,” আবেগ তাড়িত হয়ে বলছিলেন তাহির আব্বাস খান, যিনি ২০০১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য জাপানে এসেছিলেন।পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত এই ব্যক্তি এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং জাপানের নাগরিক। তিনি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ সক্রিয় এবং তিনি বেপ্পু মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছেন।দীর্ঘ সংগ্রাম
ড. খান বলেন, মৃত্যুর পর তার মরদেহের সাথে কী হবে তা নিয়ে তিনি তেমন চিন্তিত নন। কিন্তু একই বিষয় নিয়ে অন্যদের কষ্ট পাওয়া দেখে মন খারাপ হয় তার।“শেষকৃত্য হচ্ছে কোনও একটি মানুষের জন্য আপনি সর্বশেষ যা করতে পারেন সেই কাজ। আমি যদি আমার কোনও আত্মীয় বা বন্ধুকে মর্যাদাপূর্ণভাবে দাফন করতে না পারি, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবো না।”দক্ষিণাঞ্চলের কিয়ুশু দ্বীপের ওইতা এলাকায় প্রথম মসজিদ স্থাপন করা হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু সেখানে থাকা প্রায় দুই হাজার মুসলিমের জন্য একটি কবরস্থান স্থাপনের প্রক্রিয়া এখনও পরিকল্পনা পর্যায়েই আটকে রয়েছে।
মুহাম্মদ ইকবাল খান ২০০৪ সালে পাকিস্তান থেকে তার স্ত্রীর সাথে জাপানে এসেছিলেন। টোকিওর কাছে তিনি একটি গাড়ি রপ্তানির ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে তিনি তার ব্যবসা পার্শ্ববর্তী ফুকুয়া শহরে স্থানান্তরিত করেন।
যখন তার স্ত্রী ২০০৯ সালে একটি মৃত শিশুকে জন্ম দিলেন, তখন ওই এলাকায় মুসলিমদের জন্য কোনও কবরস্থান ছিল না।
“আমরা মরদেহটি একটি ছোট বাক্সে ঢুকিয়ে গাড়িতে তুলি। তারপর গাড়ি চালিয়ে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে ইয়ামানাশিতে নিয়ে যাই,” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন মি. খান। “আমার চার বন্ধু আমার সাথে গিয়েছিল। আমরা সবাই অদল-বদল করে গাড়ি চালিয়ে সেখানেই পৌঁছাই।”জাপানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইয়ামানাশি সমাধিস্থল খ্রিস্টান ও মুসলিমরা ব্যবহার করে। খ্রিস্টানরাও জাপানের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। দেশটির জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।“এই কষ্টের সময় আমি আমার স্ত্রীর সাথে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি,” বলেন মি. খান।“এটা কঠিন ছিল।”পরিস্থিতি পাল্টাতে পরিকল্পনাড. খানের সংস্থা বেপ্পুতে খ্রিস্টান সমাধিস্থলের পাশে একটি জমি কেনে। এই জমির পাশে যাদের জমি ছিল তারা “অনাপত্তিপত্র” দিলেও তিন কিলোমিটার দূরে বসবাসরত একটি সম্প্রদায় এতে আপত্তি জানায়।ড. খান বলেন, “তারা বলে যে, মরদেহ কবর দেয়া হলে তা মাটির নিচের পানিকে দূষিত করে ফেলবে। এছাড়া লেকের পানিও দূষিত হয়ে যাবে যা সেচকাজে ব্যবহার করা হয়।”গত সাত বছরে কোনও পরিবর্তন আসেনি। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।ড. খান বলেন, "মুসলিম অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের মরদেহ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।" তিনি আরও বলেন, "যারা প্রাণঘাতী ক্যান্সারের মতো রোগে ভুগছেন তারা তাদের জীবনের শেষ কয়েকটি দিন জন্মস্থানে ফিরে গিয়ে কাটাতে চান।"একটি মরদেহ পাঠাতে বিস্তৃতভাবে কাগজপত্র নিয়ে কাজ করতে হয় এবং এতে করে কবর দেওয়াটা বিলম্বিত হয়।
কিন্তু রিওকো সাতোর জন্য এই পথও খোলা নেই। কারণ তিনি একজন জাপানি নাগরিক যিনি ধর্মান্তরিত মুসলিম। তিনিও কিয়ুশু দ্বীপে বসবাস করেন।

তিনি বলেন, “অনেকে বলে, জাপানি নিয়ম মানতে না চাইলে নিজের দেশে ফিরে যাও। আবার অনেকে বলে, মরদেহ পাশের দেশে নিয়ে যাও যেখানে কবর দেওয়া নিয়ে কোনও বাধা নেই।”
“আমার স্বামী তার জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে জাপানে বাস করছে। অনেক দিন আগেই সে জাপানি নাগরিকত্ব পেয়েছে এবং জাপানের স্থানীয় লোকদের মতো সব ধরনের কর পরিশোধ করে আসছে।”
“তার উত্তরাধিকারীরাও জাপানেই বসবাস করবে। তাহলে মৃত্যুর পর তার দেহ কোথায় নিয়ে যাওয়া উচিত?”
সাতো বলেন, কবর দেওয়ার বিরোধিতার পেছনে “সাংস্কৃতিক কুসংস্কার” কাজ করেছে।
“অনেক মানুষ মনে করে যে, কবর দেওয়াটা ভয়ঙ্কর কিংবা আপত্তিকর কোনও বিষয়। কিন্তু মাত্র কয়েক প্রজন্ম আগেও জাপানে কবর দেওয়াটা বেশ স্বাভাবিকই ছিল,” বলেন সাতো।
তিনি মরদেহ দাহ্য করার অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন কিন্তু তিনি চান মৃত্যুর পর যাতে তাকে দাফন করা হয়।
“যদি দাফন হতে চাওয়াটা স্বার্থপরতা হয়, তাহলে আমার মরদেহ কী করা হবে তা নিয়ে অন্তত আমাকে স্বার্থপর হতে দিন।”রিৎসুমেইকান এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিনজি কোজিমা অবশ্য বলেন, এর পেছনের কারণগুলো আরও বেশি জটিল। তিনি এবিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং বেপ্পু মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনকে এ বিষয়ে পরামর্শও দিয়ে থাকেন।ড. কোজিমা বিবিসিকে বলেন, “আপনি মুসলিম কিনা এ বিষয়টি আসলে এর পেছনে কোনও কারণ হিসেবে কাজ করে না। বরং স্থানীয় গোষ্ঠীগত রাজনীতি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কিত জ্ঞান এবং যোগাযোগ করার জন্য সঠিক ব্যক্তি বা নেটওয়ার্ক বা সংযোগ খুঁজে পাওয়ার উপরই নির্ভর করে যে, কী সিদ্ধান্ত আসবে।”“ঐতিহাসিকভাবে অনেক ডেভেলপার, জাপানের অনেক অমুসলিম বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এটা অনেকটা ‘নতুন কিছু সহ্য না করা’র তো ব্যাপার।”সম্ভাব্য সমাধানড. খান বলেন, জাপানে মোট ১৩টি মুসলিম কবরস্থান রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি হিরোশিমায় গড়ে তোলা হয়েছে যেটি প্রায় তিন ঘণ্টার গাড়ি চালানোর পথ।মুহাম্মদ ইকবাল খান অনেক শোকাহত পরিবারের সাথে সেখানে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “হিরোশিমায় প্রয়োজনীয় সব ধরণের সুবিধা রয়েছে। সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য পানির সরবরাহ রয়েছে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা হালাল খাবার পরিবেশন করে।”এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে আবেদন করেছেন ড. খান।বর্তমানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বেপ্পুতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক টুকরো জমির বরাদ্দ দিয়েছে যেখানে ৭৯টি দাফন করা সম্ভব। বিষয়টি একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে।“এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় কোনও বিষয় নয়, এটা মৌলিক মানবাধিকার,” তিনি বলেন। “আমরা বিনামূল্যে কিছু চাইছি না। আমরা এর জন্য সানন্দে দাম দিতে রাজি আছি। কিন্তু অনুমোদন পাওয়াটাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়।”তিনি বলেন, ছোট ছোট অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন ইহুদী আর ব্রাজিল থেকে আসা খ্রিস্টানরাও এই সমস্যার মুখে পড়েছে।“সহজ সমাধান হচ্ছে, জাপানের প্রতিটি অঞ্চলে বহু ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য একটি করে সাধারণ সমাধিস্থল তৈরি করা।”এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না কারণ এখন পর্যন্ত এই ধরনের সমস্যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষই সমাধান করে থাকে।কিন্তু ড. খান নিরাশ হচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আমরা কোনও মরদেহ পোড়াবো না। এটা করা হবে না। মরদেহ দাফন করার জন্য যা যা করা দরকার হবে, আমরা সেটাই করবো।”