News update
  • Dhaka’s air quality 2nd worst in the world this morning     |     
  • Eleven missing after South African trawler sinks     |     
  • 800,000 have fled fierce fighting in Rafah, UN says     |     
  • IFC for united movement to realise fair share of water from India     |     

আগামী নির্বাচনের আগে কোনো সংলাপ না করার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রাজনীতি 2022-11-27, 8:28am

image-68209-1669469883-d102c9a4a49be464f8206c74f57807571669516120.jpg




প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে কোনো সংলাপ হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যে কোনো দল চাইলেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশন রয়েছে। কোনো দল (আগামী সাধারণ নির্বাচন) নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তারা পারবে। কোনো দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে তারা পারবে না।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ’ এর ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে ভাষণদানকালে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই বলেন ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। কাদের সাথে? ঐ বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া- সাজাপ্রাপ্ত আসামী, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সাথে?’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। আর নির্বাচন করার মত শক্তি যদি কারো না থাকে, তারা হয়তো করবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন করবে, তারা ভোট দেবে। আর ভোট চুরি তারা মেনে নেয় না। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল ১৫ই ফেব্রুয়ারি ’৯৬ সালে। বাংলাদেশের জনগণ আন্দোলন করে মাত্র দেড় মাসের মাথায়, ৩০ মার্চ তাকে টেনে ক্ষমতা থেকে নামায়। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যগে বাধ্য হয়। কাজেই এই ভোট চোরেরাই ভোট চুরি করতে জানে। কিন্তু আমাদের মেয়েদের আমি বলবো যে, ভোটের অধিকার সকলের। যে কোন নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিবে। তারা তাদেও গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে’। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মহিলাদের জন্য ২০ শতাংশ কোট থাকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ সব জায়গায় মেয়েদের কোটা রাখা আছে। সেখানে আমাদের নারীরা সরাসরি নির্বাচন করতে পারে, কোটাতেও করতে পারে। সে সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি। কাজেই আমরা নারী-পুরুষ সম্মিলিত ভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ গড়ায় এবং বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনাও তাঁর সরকার করে দিয়েছে। এখানে মা-বোনদেরও দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আপনাদের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  সাফিয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমও বক্তৃতা করেন। কেন্দ্রিয় দপ্তর সম্পাদক রাজিয়া নাসরিন শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং এর পরই সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

এরআগে বিকেল ৩ টায় প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের ৬ষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। একদিকে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন, অন্যদিকে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাপলা চত্বর পর্যন্ত ব্যানার আর ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। এদিন সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে হাজির হন। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । শেখ হাসিনা বলেন, যে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ ১শ’ বছরেও ক্ষমতায় যাবেনা ’ আল্লাহতায়ালা এ ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করেন না। আর বাংলাদেশের মানুষও তা একবারেই পছন্দ করেন না। এজন্য সেই খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলাতেই লেগে গেছে। ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎকারী, আর অর্থ ও অস্ত্র পাচারকারি, গেনেড হামলা করে আইভি রহমানের হত্যাকারি, যার বাবা জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারি- এদের সাথে ডায়ালগ বা আলোচনা করতে হবে ? এরা আবার মানবাধিকারের কথাও বলে! এটা কেমন ধরনের কথা- সেটাই আমি জিগ্যেস করি।

২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামাতের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আদলে অত্যাচার-নির্যাতন এবং মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন ও ২০১৩,১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসে মানুষ হত্যার প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তায় নেমে কিভাবে আমাদের মেয়েদের ওপর অকথ্য অত্যাচার তারা করেছে। বুটের লাথি মেরেছে, পুলিশ স্টেশনে নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার করেছে। একদিকে বিএনপির লেলিয়ে দেয়া গুন্ডা বাহিনী, জামাত শিবির এবং পুলিশ বাহিনীর সে অত্যাচার থেকে সদ্য প্রসূত বা অন্ত:স্বত্তা নারী কেউ রেহাই পায়নি কিন্ত এর প্রতি উত্তরে আওয়ামী লীগ বা তাঁর সরকারতো কিছু করছে না। 

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র আন্দোলন প্রসংগে বলেন, তাদের মেয়েরা মিছিল করছে, আন্দোলন করছে, শ্লোগান দিচ্ছে তাদের যা ইচ্ছা তা তারা করতে পারছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা এই অত্যাচারগুলো করেছিল, সেটা আমরা ভুলবো কিভাবে ? সাধারণ মানুষ ভুলবে কিভাবে ? তিনি বলেন, আমরা বলেছি- আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিটিং করেন, মিছিল করেন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যদি কোন মানুষকে পুড়িয়ে মারা বা বোমা মারা বা গ্রেনেড মারা বা এ ধরনের অত্যাচার করতে যায় কেউ, তাহলে একটাকেও ছাড়বো না। এটা হলো বাস্তব কথা। কারণ আমাদের ওপর যে আঘাত দেয়া হয়েছে, আমরা তা ভুলি নাই। আমরা সহ্য করেছি দেখে কেউ যেন মনে না করে, এটা আমাদের দুর্বলতা। শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুর্বলতা নয়, বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সাথে আছে, ঐ খুনীদের সাথে নাই। জিয়া খুনী, খালেদা জিয়া খুনী, তারেক জিয়া খুনী। তিনি বলেন, তারেক জিয়া শুধু খুনী নয়, অর্থ পাচারকারি এবং অস্ত্র চোরাকারবারি। ওদের কি অধিকার আছে মানুষের সামনে দাঁড়ানোর, আর ভোট চাওয়ার বা রাজনীতি করার ? তারপরেও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পর পর তিনবার আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আজকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যে কোনো অর্জনে নারীদের অবদান থাকতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সমাজের অর্ধেক নারী। তারা অচল থাকলে সমাজ এগিয়ে যাবে না। নারী-পুরুষকে সমানতালে এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, আমি নারীদের বিচারপতি, সচিব, ডিসি, এসপি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পথ সুগম করি। আজকে আমাদের দেশের মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, ইসলাম একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বামী ও বাবার সম্পদে নারীর অধিকার দিয়েছে ইসলাম। অথচ যারা ধর্মের নামে নারীদের ঘরে রেখে দিতে চায়, তারা জানে না।

তার সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেও নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউকে ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়।’ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কঠিন দৃঢ়তা ও সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতি করতে সহযোগিতা করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গমাতার এই ত্যাগের উল্লেখ করে তাঁর কন্যা বলেন, মেয়েরা স্বামীদের কাছে কত কিছু দাবি করে। আমার মাকে দেখিনি কোনো দিন কিছু দাবি করতে। বরং তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি তোমার কাজ করে যাও। সংসারসহ সব কিছু আমি দেখব। ঘাতকের দল যখন আমার বাবাকে হত্যা করে, তখন আমার মা বলেছিলেন, আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমাকেও হত্যা করো। সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে মায়ের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সন্তান যেন জঙ্গিবাদ,মাদক ও সন্ত্র্যাসের সঙ্গে না জড়িয়ে পড়ে, সেজন্য মায়েদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।  তিনি বলেন, ছেলে মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। ছেলে মেয়ে যেন নিজের মনের কথা মায়ের কাছে খোলা মনে বলতে পারে, সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ছেলে-মেয়ে কখনো বিপথে যাবে না। সরকার প্রধান মায়েদের উদ্দেশে আরো বলেন, লেখাপড়ার দিকে মন দেওয়া, স্পোর্টস, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম এই ধরনের কাজের মাধ্যমে মায়েদের তাদের সন্তানের মেধা বিকাশকে উৎসাহিত করতে হবে। তারা যেন বিপথে না যায়, মায়ের এখানে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। 

বাংলাদেশের নারীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি দেশটিতে নারীর ক্ষমতায়ন আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২১ অনুয়ায়ি, বিশ্বের জেন্ডার বৈষম্যসূচকে ১৫৩ টা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা এখন ৬৫। আর দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা কিন্তু এক নম্বরে আছি। যার জন্য নারী উন্নয়ন এবং জেন্ডার বৈষম্য আমরা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। 

করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় টিকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে নারীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বুষ্টার ডোজ নেয়নি, আমি প্রত্যেকটা বোনকে বলবো আপনারা কিন্তু নিজেরা বুষ্টার ডোজটা নিয়ে নেবেন। আপনি করোনা থেকে মুক্ত থাকবেন এবং পরিবারকেও মুক্ত রাখবেন।

করোনা ভাইরাস মহামারীর জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আর তার পাশপাশি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিধেধাজ্ঞার কারনে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কারো এই ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, আবারও সেই নির্দেশনা দিন দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন,অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যেন এটা না হয়। সেজন্য মা-বোনদেরকেও উৎপাদনে সম্পৃক্ত হবার আহবান জানান তিনি। তথ্য সূত্র বাসস।