News update
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     
  • CPJ denounces Trump administration's action against AP     |     

খালেদা জিয়ার যে তিনটি রোগকে বড় সংকট মনে করছেন চিকিৎসকরা

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রাজনীতি 2024-06-25, 11:30am

tyeyeryey-bd6c4a92eb6f89b939b6d370efc7bddd1719293425.jpg




হাসপাতালে চিকিৎসারত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃদপিণ্ডে রোববার পেসমেকার বসানোর পর সোমবার বিকেলে তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বেগম জিয়া মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন। যেটি তার শারীরিক পরিস্থিতিকে বেশ জটিল করে তুলেছে”।

হৃদযন্ত্রের বাইরেও এসব রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য মিসেস জিয়ার চিকিৎসকরা তাকে বিদেশ নেয়ার সুপারিশও করেছিলেন অন্তত ছয়বার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না মেলায় দেশেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

এখন কী তার অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করা হবে কী-না সে বিষয়ে এখন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

বিবিসি বাংলাকে বেগম জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোন আবেদন করা হয়নি। আবার আবেদন করা হবে কী না সেটিও নিশ্চিত নয়।''

সোমবার নিজ দপ্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ''খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা প্রয়োজন সেটি তিনি যে হাসপাতালে আছেন সেখানে থেকেই পাচ্ছেন। তার আর যেসব অসুখ আছে, তার কয়েকটা সেরে ওঠার মতো না। সেগুলোর চিকিৎসা করে কমিয়ে রাখতে হবে, সেটাই করা হচ্ছে''।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?

গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির দুই দিনের মাথায় অপারেশন করে পেসমেকার বসানো হয়।

মিসেস জিয়ার চিকিৎসকরা জানান, গত শুক্রবার রাতে যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তখন তার হার্টের পালস এক পর্যায়ে ২৫ এ নেমে এসেছিল। তখন ব্লাড প্রেশার নেমে দাড়ায় ৮০/৪০।

চিকিৎসকরা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এর আগেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে হাসপাতালে আনা হলেও এবারের মত শারীরিক অবস্থার অবনতি কখনো হয় নি।

গত রোববার বিকেলে পেসমেকার বসানোর পর সোমবার খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন পেসমেকার বসানোর পর সেটি কতখানি কাজ করছে এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থা জানতে বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে সোমবার।

মিসেস জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ''এই পেসমেকার তো শরীরের সাথে অ্যাডজাস্ট হতে হবে। এটা রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় লাগানো হয়েছে। পেসমেকার প্রথম ৭২ ঘণ্টার অবজারভেশন করতে হয়, তারপর ৪২-৪৫ দিন অবজারভেশনে রাখতে হয়।''

হৃদপিণ্ডে লাগানো এই পেসমেকার একটা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। এটা নিয়মিত বিরতিতে হার্টকে সিগন্যাল পাঠায় যাতে হার্ট পাম্প করে।

খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানান।

ডা. হোসেন বলেন, “এই পেসমেকার বসিয়ে সাময়িক একটা সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যে ঝুঁকি সেটা খুব একটা কমছে বলে আমরা মনে করছি না''।

যে তিনটি রোগ নিয়ে চিকিৎসকদের দুশ্চিন্তা

প্রায় ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হৃদরোগ, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন থেকে।

এর মধ্যে লিভার, কিডনি ও হৃদরোগকে বেগম জিয়ার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ মনে করছেন তার চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম জিয়ার লিভারে এখন যন্ত্র বসানো হয়েছে। লিভারের রোগই বেগম জিয়ার স্বাস্থঝুকির বড় কারণ।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “স্থায়ীভাবে ম্যাডামের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়নি। বর্তমানে তার যে বয়স তাতে স্থায়ীভাব লিভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব কী-না সেটা দেখা প্রয়োজন। যেটি করতে বিদেশ নিতে দেশের বাইরের ডাক্তাররা আমাদেরকে জানাচ্ছেন”।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কিডনি রোগটিকে আরেকটি ঝুঁকির কারণ মনে করা হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় কোন কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ার পর ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে দু:চিন্তাও কমছে না।

ডা. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ম্যাডামের ক্রনিক ডিজিজ অসুখ। জন হপকিংসের চিকিৎসকরা গতকালও আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কেন সেখানে চিকিৎসা করাতে আমরা যাচ্ছি না”।

এছাড়া মিসেস জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে ব্লকও ছিল আগে থেকে। সে কারণে একটা স্টেনটিংও করা ছিল বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

তার চিকিৎসকরা বলেছেন, হার্টের সাধারণত যে সব অসুখগুলো থাকে তার মধ্যে তিনটিই বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে আছে।

বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন পেসমেকার লাগানো হয়েছে। এটা কাজ করতেছে। তার পরবর্তীতে ওনার হার্টে আরো ব্লক আছে। সেগুলোরও চিকিৎসা দরকার”।

মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। মেডিক্যাল বোর্ডের এসব সভায় লন্ডন থেকে ডা. জুবাইদা রহমানসহ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকেন।

তার চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, খালেদা জিয়া গত কয়েক বছর ধরে যে সব রোগের ভুগছেন সেগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ডে আলোচনা করে থাকে।

মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মিসেস জিয়ার শরীরে যে সব রোগ বাসা বেঁধে সেটি যে কেবল শুধু একেকটি রোগ তা কিন্তু নয়। ধরুন লিভারে যখন সমস্যা হচ্ছে তখন কিন্তু হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। এক একটি রোগ আরো কিছু নতুন নতুন সংকট তৈরি করছে''।

চিকিৎসকরা বলছেন, পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে। এখন হঠাৎ করে এটি নিয়ে কোন জটিলতা তৈরি হলে সেই সমাধান কী হবে, সেই উত্তর তাদেরও জানা নেই।

ওই মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মেডিকেল বোর্ড যৌথভাবে গত আড়াই বছর যাবৎ লিখিতভাবে রিকমেন্ড করতেছে, “সি নিডস ট্রিটমেন্ট ইন এ মর্ডান মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল অ্যাব্রোড”।

এই চিকিৎসক বলেন, ''বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে নেয়ার জন্য আমাদের বা বিএনপির সুপারিশ না এটা দেশি বিদেশি ডাক্তার মিলিয়ে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ।''

বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট করেই এই বোর্ডের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা জার্মানির হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তির সুপারিশ করেছে।

গত বছরের শেষ দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিঠি দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।

এর জবাবে তখন আইনমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়াকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে আগে কারাগারে যেতে হবে এবং তারপর আদালতে আবেদন করতে হবে”।

পরে ২৬শে অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খালেদা জিয়ার যকৃতের রক্তনালীতে অস্ত্রোপচার করেন।

মিসেস জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার যে সব রোগ আছে সেটা দেশে সম্ভব হলে মেডিকেল বোর্ড বিদেশ নিতে আবেদন করতো না।

ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হোসেন বলেন, “মেডিকেল বোর্ড বার বার সুপারিশ করেছে। কিন্তু এই সুপারিশ আমলে নেয়া হয়নি। দেশে চিকিৎসায় যে ঝুঁকি আছে সেটা নিয়ে আমাদের বিদেশি ডাক্তাররা সতর্ক করছে। কিন্তু আমাদের তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না।

রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ''মেডিকেল বোর্ড বারবার বলেছে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেসের চিকিৎসা করাতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল প্রয়োজন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না সরকার।''

সোমবার এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তিনি যে হাসপাতালে আছেন, সেখানে সেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। তার কয়েকটা সেরে ওঠার মতো না। এগুলোর চিকিৎসা করে কমিয়ে রাখতে হবে। সেটা করা হচ্ছে”।

জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত রয়েছেন। শর্তগুলো হলো – প্রথমত তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

সরকারের তরফ থেকে বরাবর বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. হোসেন বলেছেন, ''মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে এখন পর্যন্ত ছয়বার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ চিকিৎসার জন্য নিতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া দেয় নি।''

তিনি জানান, সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে প্রয়োজনে আবার আবেদন করা হবে। তবে, খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে চিকিৎসা জরুরি।

তবে, আবেদনের পরিকল্পনা এখনো নেয়া হয়েছে কী না সেটি বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল মিসেস জিয়ার পরিবারের কাছে।

তার বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ''নতুন করে আবেদনের কোন পরিকল্পনা এখনো নেয়া হয় নি।'' বিবিসি বাংলা