News update
  • Hadi's condition 'very critical' after bullet causes 'massive brain injury'     |     
  • DMP intensifies drive to arrest attackers of Hadi     |     
  • Tarique terms attack on Hadi a conspiracy against democracy     |     
  • Man held for tying, beating up youth on theft suspicion in Gazipur     |     
  • Sajid (2) lifted after 32 hrs from deep Rajshahi well, not alive     |     

কেন আমরা জেমসের গান শুনি?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2025-10-03, 3:33pm

jems-d268730a1be879df70cea522f3bcc9e51759483985.jpg




বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে যে ক'জন শিল্পী নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছেন, তাঁদের মধ্যে 'গুরু' জেমস বা ফারুক মাহফুজ আনাম অন্যতম। তাঁর গান কেবল সুর বা কথার সমষ্টি নয়, বরং এটি এক বিশেষ দর্শন, এক বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর। দশকের পর দশক ধরে নতুন প্রজন্ম কেন আজও জেমসের গানে বুঁদ হয়ে থাকে, তার কারণ নিহিত আছে তাঁর গানের ধারাবাহিকতা, গায়কি এবং লিরিক্যাল স্বকীয়তার মধ্যে। এটি কেবল 'রক' গান নয়, এটি 'নগর বাউল'-এর জীবনবোধ।

জেমসের উত্থান এমন এক সময়ে, যখন রক মিউজিক বাংলাদেশে সবেমাত্র জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তিনি তাঁর ব্যান্ড 'ফিলিংস' (পরে 'নগর বাউল') নিয়ে যে ধারাটির জন্ম দেন, তা ছিল সম্পূর্ণ নতুন।  'স্টেশন রোড' (১৯৮৮) বা 'জেল থেকে বলছি' (১৯৯৪)-এর মতো অ্যালবামগুলোতে তাঁর গিটারের কর্কশ রিফ, ড্রামের দাপট এবং বাউলের মতো সুরেলা মেলোডি একটি অদ্ভুত মাদকতা সৃষ্টি করত। জেমসের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত ভারী এবং তীক্ষ্ণ যা তাঁকে সহজেই অন্য সব শিল্পীর থেকে আলাদা করেছে। তাঁর গাওয়ার ভঙ্গি সম্পূর্ণ নিজস্ব, যেখানে শ্রোতারা পান বিদ্রোহ, হতাশা এবং মুক্তির এক তীব্র আহ্বান।

জেমসের গানের কথা তাঁর শিল্পীসত্তার গভীরতম দিকটি প্রকাশ করে। তিনি শহুরে জীবনের কোলাহল, হতাশা, প্রেম এবং আধ্যাত্মিকতাকে একত্রিত করেছেন। তাঁর গানের লিরিক্সে শহরের কোলাহল ও বাউলিয়ানা এক হয়ে গেছে, জন্ম নিয়েছে 'নগর বাউল' ধারণা। 'নগর বাউল' (১৯৯৬) অ্যালবামের "তারায় তারায়" গানটি কবি শামসুর রহমানের কবিতা অবলম্বনে রচিত, যা জেমসের লিরিক্যাল গভীরতা প্রমাণ করে। "লেইস ফিতা লেইস," "পাগলা হাওয়া," "দিওয়ানা মাস্তানা," কিংবা "হারাগাছের নুরজাহান"-এর মতো গানগুলোতে একদিকে যেমন শহুরে জীবনের সহজতা ও টানাপোড়েন আছে, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে রোমান্টিকতা। এই গানগুলো মানুষের জীবনের দৈনন্দিন অনুভূতিকে সরাসরি আঘাত করে।

জেমস শুধু বাংলাদেশের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকেননি, তিনি বলিউডে প্রবেশ করে তাঁর প্রভাবকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যান। "ভিগি ভিগি" (গ্যাংস্টার), "চল চলে" (ওহ লামহে) এবং "আলবিদা" (লাইফ ইন আ মেট্রো)-এর মতো গান গেয়ে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বলিউডের সুরকাররা তাঁর গায়কির এই 'বিশেষত্ব' কে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এছাড়াও, জেমসের লাইভ কনসার্ট মানেই বিদ্যুৎ আর উন্মাদনা। তাঁর শক্তিশালী মঞ্চ উপস্থিতি এবং গিটারের সঙ্গে ভোকালের দুর্দান্ত মিশেল দর্শকদের এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।

আমরা জেমসের গান শুনি কারণ তাঁর গান সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে শ্রোতাকে এক ধরণের আরাম ও মুক্তির স্বাদ দেয়। জেমসের কণ্ঠস্বর এমন একটি আবেগ তৈরি করে, যা হৃদয়ের ভেতরের লুকানো কষ্ট, ক্ষোভ বা আনন্দকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। 'গুরু' জেমস কেবল একজন গায়ক নন, তিনি একটি অনুভূতি, একটি জীবনধারা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে রক মিউজিকের প্রতি আকৃষ্ট করে চলেছে। তাঁর এই নিরন্তর প্রাসঙ্গিকতাই প্রমাণ করে, কেন জেমসের গান আজও আমাদের প্লে-লিস্টে এক অপরিহার্য অংশ।