ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খনিজ। কারণ শরীরের কাঠামো তৈরি হয় হাড়ের মাধ্যমে। আর এ হাড়ের সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে ক্যালসিয়ামের ওপর। যদি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে আর সেটি যদি সঠিক সময়ে পূরণ না হয় তবে দীর্ঘকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পায়।
যেমন মেরুদণ্ড-পেশির সমস্যা, নখ-ত্বক-দাঁত-চুলের সমস্যা, বিষণ্নতা, ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের অভাবে ভয়ংকর যে রোগটি হয় তা হলো অস্টিওপেনিয়া ও অস্টিওপরোসিস। সোজা ভাষায় যাকে হাড় ক্ষয়রোগ বলা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে অকালেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। তাই নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার ডায়েটে রাখা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে হাড়ক্ষয় ও জয়েন্টে ব্যথায় বেশি ভোগেন রোগীরা। আর এ রোগ মূলত হয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে। এ ঘাটতি পূরণে ওষুধ থাকলেও বেশি পরিমাণে এ-জাতীয় ওষুধ সেবনে কিডনি বিকলসহ শরীরে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধে। তাই প্রাকৃতিক খাবার থেকে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা উচিত বলে মনে করেন ডায়েটেশিয়ানরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে আসুন এক নজরে জেনে নিই, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দ্রুত পূরণ করে এমন ৫ খাবারের নাম-
১। সিদ্ধ ঢেঁড়স: সবজি হিসেবে অনেকেরই পছন্দ ঢেঁড়স। প্রতি ৫০ গ্রাম ঢেঁড়সে প্রায় ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এটি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। নিয়মিত খাবারের তালিকায় ঢেঁড়স রাখলে উপকার মিলবে দ্রুতই।
২। দুধ ও চিজ: দুধ পান করার অনেক উপকারিতা। তার মধ্যে একটি হলো, এতে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম। দুধে আরও থাকে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি। এক কাপ গরুর দুধে ২৭৬-৩৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এদিকে চিজ থেকে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম দুটিই পাওয়া যায় যেহেতু এটি দুধ দিয়েই তৈরি। এতে ৩৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় প্রতি আউন্স চিজে।
৩। সিদ্ধ ডিম ও ঘি: গরম ভাতে ঘি মাখিয়ে সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন। এতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ঘিয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন ডি। আর একটি ডিমের কুসুমে ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৬৬ মিলিগ্রাম, ৯.৫ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে সেলেনিয়াম এবং ১৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। তাই ডায়েটে এ খাবারকে প্রাধান্য দিন।
৪। সাদা তিল: মাত্র ১০০ গ্রাম সাদা তিলে রয়েছে ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই ক্যালসিয়ামের শ্রেষ্ঠ উৎস বলা হয় সাদা তিলকে। সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কা কমায়। জিঙ্ক হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।
৫। বাদাম: বাদামেও থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম। পুষ্টিবিদরা বলেন, ১০০ গ্রাম বাদামে থাকে প্রায় ২৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই নিয়মিত বাদাম খেলে তা শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। তবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে খুব বেশি বাদাম খাবেন না। এরজন্য ডায়েটে প্রতিদিন কয়েকটি কাঠ বাদামই যথেষ্ট।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দ্রুত কমায় কোন খাবার?
পরামর্শ
একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। তবে বয়স্ক নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাই শরীরে এ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দ্রুত পূরণে শুধু ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেলেই হবে না, দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও মনে রাখতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো-
১। মনে রাখবেন, ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে চকলেট, কার্বোনেটযুক্ত পানীয় ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। তাই চেষ্টা করবেন ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে।
২। পাশাপাশি যে বিষয়টি আপনার মনে রাখতে হবে তাহলো ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন এ, সি এবং ডি। আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারও ক্যালসিয়ামের কাজে সাহায্য করে। তাই যখন ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাবেন তখন ভিটামিন এ, সি এবং ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও নিশ্চিত করুন।