News update
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     

কোন নারীর ষড়যন্ত্রে বাংলা বিহার উড়িষ্যার জনগণের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়েছিলো?

Kazi Azizul Huq ঐতিহ্য 2024-01-14, 12:25am

kazi-azizul-huq-43b2851149d68a1f2ab49ac751f417471705170318.jpg

Kazi Azizul Huq



Sayedur Rahman

এক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ লোক ভুল উত্তর প্রদান করবেন। দু'একজন সঠিক উত্তর জানলেও তারাও ভুলটা লিখতে বাধ্য। কারণ উত্তরদাতা সঠিকটা জানলেও পরীক্ষক সঠিকটা জানেন না। 

যে জনশ্রুতি শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসছে, তা যদি কেউ মিথ্যা বলে তাহলে স্বভাবতই জনগণ গ্রহণ করতে পারবে না।

২০১০ সালের জনপ্রিয় হিন্দি গান "মুন্নী বদনাম হুয়ি, ডার্লিং তেরি লিয়ে…", ১৯৯২ সালের পাকিস্তানি সিনেমার,"লাড়কা বদনাম হুয়া, হাসিনা তেরে লিয়ে…" গানের নকল। সঙ্গীত প্রিয় জনতা মুন্নীর বদনাম যতটুকু জানে লাড়কার বদনামের কথা ততটা জানে না। 

আবার কেউ ঊর্দূটা জানলেও গাইতে পারবে না। কারণ ঊর্দূ বিদ্বেষী হিন্দি প্রিয় ভাষাপ্রেমিকদের চেতনা জেগে উঠবে।

বাংলা বিহার উড়িষ্যার স্বাধীনতাও বিলুপ্ত হয়েছিলো মুন্নী নামক এক নটীর কারণে, যদিও ঐতিহাসিকগণ এবং আমরা দায়ী করি ঘষেটি বেগমকে।

মারাঠাদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে মীরজাফর খ্যাতি লাভ করে। ধীরে ধীরে নবাবের সাথে তার সখ্যতা বাড়তে থাকে এবং নবাব তাঁর বৈমাত্রেয় বোন শাহ খানম সাহিবাকে তার সাথে বিবাহ দেন। 

নিজের চেয়ে উঁচু পরিবারে বিবাহ করলে অধিকাংশ পুরুষের অবস্থা হয় ফান্দে পড়া বগার মতো। মীরজাফরের অবস্থাও ছিল সেরকম। আলীবর্দীর বোন শাহ খানম চোখে পড়ার মত অত সুন্দরী ছিলো না। তাঁর চেয়ে মহলের দাসীরা অধিক সুন্দরী ছিলো। 

মীরন এবং ফাতিমার জন্মের পর থেকে তিনি প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকতেন। অসুস্থ ঘোড়ায় চড়ে রাস্তা পার হওয়া যায়, কিন্তু যুদ্ধ জয় করা যায় না। অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে সংসার করা গেলেও, কামনা পূরণ সম্ভব নয়।

আলীবর্দীর তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই হাজী আহমেদের তিন ছেলের সাথে। এর মাঝে বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম ছিলেন নিঃসন্তান। 

তিনি আমিনার ছেলে সিরাজউদ্দৌলার ভাই একরামুদ্দৌলাকে দত্তক নিয়েছিলেন। একরামুদ্দৌলার বিবাহ উৎসবে জৌলুস বাড়ানোর জন্য পারস্য থেকে নটীর দল আনা হয়। 

ঐ নটী দলের সদস্য ছিলো মুন্নী বাঈ। আরো অনুষ্ঠানের আশায় নটীর দল মুর্শিদাবাদে থেকে যায়। অসম্ভব সুন্দর দেহবল্লবীর অধিকারিণী মুন্নী বাঈ। 

তার রূপ মাধুরী আর নুপুরের নিক্কনে মহলের অনেক যুবা, বৃদ্ধ পুরুষেরই অন্তরে কাঁপন ধরে। সুন্দরী মুন্নী বাঈ আলীবর্দী খানের প্রধান সেনাপতি মীর জাফরেরও নজর কাড়ে। মীরজাফর প্রায়ই জলসা ঘরে গিয়ে মুন্নী বাঈয়ের সাথে খোশগল্প, ফূর্তিতে মেতে উঠতেন।

"কাম হতে হয় প্রেমের উদয়, প্রেম হইলে কাম থাকে না," মীরজাফরের জীবন যেন এর বাস্তবরূপ পাওয়া যায়। কাম বাসনা চরিতার্থ করার জন্য মীরজাফর মুন্নীর জলসাতে গেলেও এক সময় প্রেমে পড়ে যায়। 

মীরজাফরের মরু হৃদয়ে সে যেন এক বহতা নদী। কিন্তু সে নদী যে কোন সময়ে গতিপথ বদল করতে পারে, তাই সে দখল করতে চাইলো।

তৎকালে রাজা, বাদশাহ, শাহজাদা, আমত্যদের জন্য ইন্দ্রিয়বিলাস দোষের কিছু ছিলো না। কিন্তু তখনকার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অভিজাত শ্রেণীর পুরুষেরা দাসীদের বিয়ে করতে পারলেও রং মহলের কোন নটীকে বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না। 

দাসীদের মর্যাদা অনেকটা বর্তমান সময়ের গৃহকর্মীর ন্যায়; আর নাচনেওয়ালী নটীদের মূল্য পতিতাদের চেয়ে বেশি না। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়ও অনেকে গৃহকর্মী বিয়ে করলেও, পতিতাকে সহজে বিয়ে করে না।

মুন্নী বাঈ মীরজাফরের কাছে শাহ খানমের চেয়ে প্রিয় হলেও তাকে বিয়ে করে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মত হিম্মত মীরজাফরের ছিলো না। 

সে একেতো নবাবের বোন জামাই, অন্যদিকে প্রধান সেনাপতি। তার নিজস্ব কোনো ঘরও নেই যে মুন্নীকে বিয়ে করে সে ঘরে তুলবে। বোনকে দেওয়া নবাবের জাফরাগঞ্জ মঞ্জিল ছিলো তার বাস। 

সুতরাং মুন্নী বাঈকে ঘরে তোলার স্বপ্ন বুকে মাটি চাপা দিয়ে, অপেক্ষা করা ছাড়া তার সামনে আর কোন পথ ছিলো না।

নবাব আলীবর্দী খাঁ'র মৃত্যু এবং সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন আরোহন তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পথ সুগম করে দেয়। নবাব সিরাজউদ্দৌলা মাত্র পনেরো মাস মসনদে ছিলেন। 

পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর সে তার খায়েশ পূরণ করে বাংলার নবাব হয়ে। 

সকল লোক লজ্জাকে পায়ে ঠেলে পঁয়ষট্রি বছরের বৃদ্ধ নবাব মীর জাফর আলী খাঁ এক নটীকে বিয়ে করে।

মীরজফরই প্রথম ব্যক্তি যিনি নটীকে বেগমের মর্যাদা প্রদান করেছেন। শাহজাদা সেলিমের প্রেম যেখানে ব্যর্থ, মীরজাফরের প্রেম সেখানে সফল। তার এই প্রেম কাহিনী নিয়ে অমর প্রেমের গল্প, কবিতা, উপন্যাস রচিত হতে পারতো। 

প্রেমিক প্রবরদের কাছে সে হতে পারতো আদর্শ কিন্তু তা হয়নি, কারণ যেভাবে সফল হয়েছে সেভাবে সফল হওয়া লোকদের মানুষ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ঘৃণাই করে। পরে মীরজাফর রব্বু বাঈ নামে আরেক নটীকে বিবাহ করে।

মীরজাফরের মৃত্যুর পর থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই দুই নটীর গর্ভজাত সন্তান এবং তাদের উত্তরাধিকাররা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব ছিল। 

কিন্তু তাদের নিয়ে ঐতিহাসিকদের কাছে না তেমন তথ্য পাওয়া যায়, না জনগণের মুখে কোন কথা শোনা যায়। 

কারণ, নটীর পোলাদের নিয়ে মাথা ঘামিয়ে ঐতিহাসিকগণ বা জনগণ সময় নষ্ট করতে চায়নি। নবাবের আসনে শত বছর বসে থাকলেও নটীর পোলা নটীর পোলাই থাকে।

© Sayedur Rahman