রামুতে অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ক র্কমশালা অনুষ্ঠিত
তানজিলা রহমান
গত ৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার কক্সবাজার জেলা রামু উপজেলার হিমছড়ি কনফারেন্স রুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যে খামার যন্ত্রপাতি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধিকরণ (এসএফএমআরএ)” প্রকল্পের অর্থায়নে দেশীয় উপযোগী অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ক র্শীষক র্কমশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, ব্রি মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, পরিচালক (প্রশাসন), প্রকল্প পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: কবির হোসেন, হর্টিকালচার ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপপরিচালক, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফাহমিদা মোস্তফা, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, সরবরাহকারী, দেশীয় উদ্যোক্তা ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রামু উপজেলা কৃষি অফিসার তানজিলা রহমান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, কৃষি উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্রি অটো সিড সোয়ার মেশিন ও অন্যান্য দেশীয় উপযোগী অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবনের জন্য প্রকল্প পরিচালককে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, কৃষক পর্যায়ে প্রকল্প উদ্ভাবিত মেশিনগুলো সরবরাহ করা হলে কৃষক কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবে। আমদানী নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজের যে বিশাল বাজার তা নিজেরাই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, দেশীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবহারকারী কৃষক সকলেই লাভবান হবেন।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণে অধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এটি শ্রম সাধ্য ও ব্যয়বহুল। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বা ধানের চারা রোপণ যন্ত্রের উপযোগী ট্রেতে ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদনরে একটি সাশ্রয়ী বীজ বপন যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উদ্ভাবিত যন্ত্রটি স্থানীয় ওয়ার্কশপে স্থানীয় সহজলভ্য কাঁচামাল দিয়ে খুব সহজে তৈরী করা যায়। প্রতি ট্রেতে অংকুরিত বীজ ছিটাতে ১ (এক) সেকেন্ড সময় লাগে। যন্ত্রটি দিয়ে প্রতি ট্রেতে ৯৫ থেকে ১৬০ গ্রাম অংকুরিত বীজ বপন করা যায়। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ১৪ হাজার ৪০০টি ট্রেতে বীজ বপন করতে পারে। যন্ত্রটির সাহায্যে বীজ বপনের পর ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে উপরের স্তর (৬ মিমি) কভার করা যায়।
বিভিন্ন জাতের ধানের জন্য বীজ বপনের হার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যন্ত্রের ওজন (৯ কেজি) কম হওয়ায় সহজেই হাতে বহন করা যায়। হপারের বীজ ধারণ ক্ষমতা ৯ কেজি হওয়ায় প্রতিবার ৬০ থেকে ৭৫টি ট্রে তৈরী করা যায়। যন্ত্রটির আনুমানিক বাজার মূল্য ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাত্র।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ব্রি অটো সীড সোয়ার মেশিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে এক সাথে ট্রে তে মাটি, পানি, বীজ এবং উপরের মাটি দেয়া যায়। যন্ত্রটির সাহায্যে মিনিটে ২৮ থেকে ৩০টি ট্রে করা যায়।
উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার কৃষি যান্ত্রিকীরণের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও সীড সোয়ার মেশিনের গুরুত্ব এর উপর জোর দেন । তিনি বলেন, হাতে বীজ ছিটানো শ্রমসাধ্য, সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল কাজ। তাছাড়া এতে সমভাবে বীজ ছিটানো যায় না। কৃষকের শ্রম লাঘবের জন্য যন্ত্রের সাহায্যে ম্যাট টাইপ চারা তৈরিতে সমভাবে বীজ ছিটানো অত্যাবশ্যকীয়। তিনি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও স্মার্ট কৃষির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
কৃষি যন্ত্র বিতরণ রামু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এমন উদ্যোাগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য অধিক ফসল উৎপাদনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধানের চারা রোপণ যন্ত্রের উপযোগী ট্রে’তে ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদন একটি চ্যালেঞ্জ বা কষ্টকর কাজ। এই যন্ত্রটি উদ্ভাবনের ফলে সে কাজটি অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। ক্রমান্বয়ে যন্ত্রগুলো মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করনের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিদেশ নির্ভরতা কমাতে ব্রি নিরলসভাবে কাজ করছে। ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ও সাশ্রয়ী করার জন্য ব্রি পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।
যার সুফল কৃষকরা পেতে শুরু করেছেন এবং আশাকরা যায় অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই ধান চাষ শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় চলে আসবে। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
(তানজিলা রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, রামু, কক্সবাজার)