তরুণ-যুবকদের বিক্ষোভে সোমবারের (৮ সেপ্টেম্বর) পর মঙ্গলবারও (৯ সেপ্টেম্বর) উত্তাল ছিল নেপাল। এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার কাঠমান্ডুতে আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা যায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের। এত তরুণকে বিক্ষোভে শামিল করলেন কে বা কারা, তা নিয়েও আছে জল্পনা।
নেপালের একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারবিরোধী এই আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি ৩৬ বছরের এক যুবক, নাম সুদান গুরুং।
কে এই সুদান গুরুং
সুদান ২০১৫ সাল থেকে ‘হামি নেপাল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালান। মূলত ছাত্র-যুবদের পরিচালিত এই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই নেপালের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে আসছে।
এক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘ডিসকো জকি’ বা ‘ডিজে’ হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সুদান। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে এক সন্তানকে হারান তিনি। তারপরেই স্থির করেন নেপালে তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে কাজ করবেন।
২০১৫ সালের পরেই সুদান ত্রাণ এবং বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে হাত পাকাতে থাকেন। স্থানীয় স্তরে মেলামেশার ফলে নেপালের ছাত্র-যুবকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
অতীতে নেপালের বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউটে দুর্নীতির প্রতিবাদ করে ঘোপা ক্যাম্প আন্দোলনের শামিল হয়েছিলেন সুদান। সেই সময়ও এই যুবককে নিয়ে নেপালের একাংশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। তবে সোমবারের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর নতুন করে আলোচিত হচ্ছে সুদানের নাম।
নেপালের অনেকেই মনে করছেন দেশটিতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ ২৬টি সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে যুব সমাজের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। সেটাকেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কাজে লাগিয়েছেন সুদান।
নেপালের আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘জেন-জি’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন। বিভিন্ন পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, কেবল ফেসবুকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণেই নয়, নেপালের ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য, সরকারি স্তরে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের কারণেও ক্ষুব্ধ সে দেশের ছাত্র-যুবকদের একাংশ।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নামে মঙ্গলবারও বিভিন্ন মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘কেপি চোর, গদি ছোড়’। এদিকে, সুদান নিজে অহিংস আন্দোলনের কথা বললেও, তা ক্রমশ সহিংস রূপ নিয়েছে। ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।
সুদানের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে জ্বলজ্বল করছে তার ডিজে পরিচয়। তিনি গান বাজাচ্ছেন, এমন ভিডিও রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে তার অংশগ্রহণের ছবিও। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে দক্ষ এই সুদানই এখন নেপাল সরকারের ‘মাথাব্যথার কারণ’। সোশ্যাল মিডিয়া দিয়েই তিনি নেপালের তরুণদের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
‘টিকটক’-এর মতো যে অ্যাপগুলো সরকারি বিধিনিষেধের মুখে পড়েনি, সেগুলোর মাধ্যমেই আন্দোলনকারীরা পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।