সম্প্রতি বিবৃতি জারি করে নতুন দিল্লির মাল্টা হাই কমিশন জানিয়েছে, সেখান থেকে আপাতত বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হবে না৷ কেন এই বিবৃতি?
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ মে৷ ওইদিন নতুন দিল্লির মাল্টা হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়ে বলা হয়, পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ওই হাই কমিশনে বাংলাদেশি নাগরিকরা ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন না৷ উল্লেখ্য, ঢাকায় মাল্টার দূতাবাস বা হাইকমিশন নেই। তাই, ভারতে এসে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। মাল্টা হাইকমিশন আবার নিজে এই আবেদনপত্র জমা নেয় না৷ ভিএফএস গ্লোবাল নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে তারা আবেদনপত্র গ্রহণ করে৷ বস্তুত, ভারতে এখন অধিকাংশ দেশই ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে ভিসার আবেদনপত্র গ্রহণ করে এবং তা প্রসেস করে৷
বাংলাদেশের মতো নেপালের নাগরিকদেরও বহু ক্ষেত্রে ভারতে এসে অন্য দেশে ভিসার আবদনপত্র ভরতে হয়। কিন্তু নেপালের নাগরিকদের ভারতে আসার জন্য ভিসা লাগে না৷ বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে আসতে ভিসা করাতে হয়৷ একটানা ৬০ দিনের ভিসা নিয়ে তাদের ভারতে আসতে হয়। ২০২২ সালে এমন বহু বাংলাদেশি ভারতের ভিসা করিয়ে দিল্লিতে এসে মাল্টার ভিসার আবেদনপত্র জমা করেন৷
বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতে এসে মাল্টার ভিসার আবেদন করিয়েছিলেন রাসেল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, মাল্টায় তার চাকরি পাকা হয়ে গেছিল৷ মাল্টার থেকে ছয় মাসের কাজের অনুমোদনও তিনি পেয়েছিলেন৷ সেই সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে তিনি প্রায় চার মাস আগে দিল্লিতে আসেন৷ সেখানে তিনি ভিএফএস-এ গিয়ে মাল্টার ভিসার আবেদনপত্র জমা দেন৷ ভিএফএস তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিল, একমাসের ভিতরেই তিনি ভিসা পেয়ে যাবেন৷ কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি কোনো উত্তর পাননি৷
রাসেল বলেছেন, ‘‘ভারতের ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মাল্টার ভিসা আসেনি। পাসপোর্ট ভিসা অফিসেই থেকে গেছে৷ ফলে দেশেও ফিরতে পারছিলাম না৷ ভারতে অতিরিক্ত থাকার জন্য প্রতি ১২ দিন অন্তর ১২ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে৷’’ ২৯ মে মাল্টা হাই কমিশন বিবৃতি জারি করার পর ৯৪ দিনের মাথায় রাসেল পাসপোর্ট ফেরত পান৷ এবং বাংলাদেশে ফেরত যান৷ ৯৪ দিনে ভারতে তার খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ ভারতীয় টাকা৷
এটা কেবল রাসেলের একার অভিজ্ঞতা নয়৷ প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। আলাদা আলাদা করে তারা ডয়চে ভেলেকে সে কথা জানিয়েছেন৷
কেন হঠাৎ মাল্টা হাই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিল? ডিডাব্লিউ দিল্লিতে মাল্টা হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু ফোনে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে চাননি সেখানকার প্রতিনিধি৷ প্রশ্নটি ইমেল করতে বলা হয়। ডিডাব্লিউ ইমেল করলেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তার কোনো উত্তর আসেনি৷
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের এবিষয়ে কিছুই করার নেই৷ মাল্টার ভিসা পাওয়ার জন্য যে বাংলাদেশিরা ভারতে আসার ভিসার আবেদন করেছিল, ভারত তাদের ভিসা দিয়েছে৷ ২৯ তারিখ যে নোটিস জারি হয়েছে, তা মাল্টার বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই। ভারত তাতে নাকও গলাবে না৷
দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সাংবাদিকতা করছেন আউটলুকের কূটনৈতিক সম্পাদক প্রণয় শর্মা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘বিষয়টি একান্তই মাল্টার সিদ্ধান্ত। ভারতের এখানে কোনো বক্তব্য আছে বলে মনে হয় না৷’’
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত আরেক কর্মী ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘মাল্টার সিদ্ধান্ত সাময়িক। ভিসা নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল৷ সে জন্যই রাতারাতি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কী সমস্যা? ভিএফএস গ্লোবালের এক কর্মী জানিয়েছেন, মাল্টার ভিসা করানোর জন্য বাজারে প্রচুর দালাল চলে এসেছে। ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে নিচ্ছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে দ্রুত ভিসা করিয়ে দেওয়ার৷ কিন্তু ভিসা করানোর কোনো এক্তিয়ার তাদের নেই৷ মাল্টা হাই কমিশনের কাছে এবিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল৷ তারই ভিত্তিতে ওই দালালচক্র বন্ধ করতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু সরকারিভাবে তারা একথা জানায়নি৷
ফের কবে বাংলাদেশিরা দিল্লির মাল্টা হাই কমিশন থেকে আবেদন করতে পারবেন, তা এখনো অনিশ্চিত। যারা ভারতে এসে আটকে পড়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ দালালের মাধ্যমে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন৷ সে কারণেই তাদের আবেদনপত্র ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে ভিএফএস-এর ইঙ্গিত৷
বাংলাদেশি নাগরিকদের অভিযোগ, দিল্লিতে ভিএফএস দপ্তরের বাইরে তাদের হেনস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় তাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। যদিও ভিএফএস এই অভিযোগ মানতে চায়নি। তবে ভিএফএস-এর দপ্তরের বাইরে থেকে যে ফেসবুক লাইভ তারা করেছিলেন, তাতে দেখা গেছে, পুলিশের সঙ্গে আবেদনকারীদের বচসা হচ্ছে। তথ্য সূত্র ডয়চে ভেলে বাংলা।